চট্টগ্রাম রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

সর্বশেষ:

রোজা মুসলমানদের উপর ঐতিহ্যগতভাবে ফরজ

রায়হান আজাদ

৪ মার্চ, ২০২৫ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আল-কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের প্রতি সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয় তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যেন তোমরা তাকওয়া তথা খোদাভীতির পথ অনুসরণ করতে পারো।’-(সুরা বাকারা; আয়াত: ১৮৩)। এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, সিয়াম মুসলমানদের উপর ঐতিহ্যগতভাবে ফরজ।

 

তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে আছে, আল-কোরআনের উদ্ধৃতি- ওয়াল্লাজিনা মিন কাবলিকুম বা যারা তোমাদের পূর্বে ছিল কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক। এর দ্বারা হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হজরত ইসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল উম্মত এবং শরিয়তকেই বোঝায়। এতে বোঝা যায়, নামাজের ইবাদত থেকে যেমনিভাবে কোন উম্মত বা শরিয়তই খালি ছিল না, তেমনি রোজাও সবার জন্য ফরজ ছিল।

 

আয়াতের মধ্যে শুধু বলা হয়েছে যে, রোজা যেমন এই উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী সব উম্মতের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। এ কথা দ্বারা এমনটা বোঝায় না যে, আগেকার উম্মতের রোজা সমগ্র শর্ত ও প্রকৃতির দিক দিয়ে আমাদের উপর ফরজকৃত রোজারই অনুরূপ ছিল। যেমন- রোজার সময়সীমা, সংখ্যা এবং কখন তা রাখা হবে, এসব ব্যাপারে আগেকার উম্মতের রোজার সাথে এই উম্মতের রোজার পার্থক্য হতে পারে; বাস্তব ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই।

 

এ সম্পর্কে এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার লেখক খুব সুন্দর তথ্য দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, রোজা কালচারভেদে অনেকটা পৃথক; কিন্তু এমন কোন ধর্মের নাম পাওয়া যায় না, যে ধর্মে তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মোটামুটিভাবে রোজাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

 

হিন্দু শাস্ত্রে উপবাসব্রত পালনের নির্দেশ রয়েছে। তাই তারা প্রতিমাসের একাদশী ও দ্বাদশী তিথিতে উপবাসব্রত পালন করে থাকে। কোন কোন ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসের প্রতি রবিবারও উপবাস পালন করেন। অগ্নিপূজক পারসিকদের ধর্মযাজকগণও রোজা রাখেন। তাদের রোজা মানে বিকৃত রোজা। কেবল উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এদের রোজায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ফুটে ওঠে না।

 

হজরত আদম আলাইহিস সালামের উপর প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের তিনটি রোজা ফরজ ছিল। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের উম্মতের উপর আশুরা এবং সপ্তাহের রোজা ছাড়া আরও কদিন রোজা ফরজ ছিল। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত নুহ আলাইহিস সালাম থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব যুগ পর্যন্ত আশুরা এবং প্রতিমাসে তিনটি রোজা নির্ধারিত ছিল। রমজান মাসে রোজা রাখার হুকুম আসলে এ বিধান মানসুখ (রহিত) হয়ে যায়।

 

হজরত হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে, পূর্বেকার সকল উম্মতের উপর নামাজের ন্যায় রোজা ফরজ ছিল। খৃস্টানদের উপর এক মাস রোজা ফরজ ছিল। তারা নিজেদের মনগড়া মতবাদে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করে নেয়।

 

হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলি থানভি (রহ.) তাফসিরে রুহুল মাআনি থেকে নিম্নলিখিত হাদিসটি নকল করেন, খৃস্টানদের উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ ছিল। একদা তাদের কোন নৃপতি পীড়িত হওয়ায় তারা মানত করলো যে, নৃপতির রোগমুক্তি হলে আমরা আরও দশটি রোজা বৃদ্ধি করে নেবো।

 

সুতরাং, মাহে রমজানের ঐতিহ্য, মর্যাদা ও মহিমা রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে দৃঢ় বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সাথে রোজা পালন করতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সে তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট