সমগ্র মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা সেখানে নানা রকমের সংস্কারকের দেখা পাই। পৃথিবীর বুকে আর্বিভূত হয়েছিল অনেক দার্শনিক, বড় বড় চিন্তাবিদ, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি, রাজা-মহারাজা, সম্রাট, দিগি¦জয়ী বীর, বড় বড় দল ও মতের প্রতিষ্ঠাতা, সমাজ কাঠামোতে বার বার আলোড়ন সৃষ্টিকারী দোর্দন্ড প্রতাপশালী বিপ্লবী, নিত্য নতুন ধর্মমতের প্রবর্তক এবং আইন প্রণেতাগণ। কিন্তু নবী-রাসূলগণ ব্যতীত বাকীদের জীবনী, আদর্শ এবং সার্বিক কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে কোথাও কোন পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ এবং সুফল দেখা যায় না। যেটুকু কল্যাণ ও সুফল চোখে পড়ে তা নিতান্তই আংশিক, একপেশে এবং ক্ষণস্থায়ী।
প্রকৃতপক্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমেই সাধিত হয়েছিল মানবসভ্যতার প্রকৃত উত্থান এবং উজ্জীবন। সত্য ও ন্যায়ের এক স্বর্ণোজ্জ্বল প্রভাতের অভ্যুদয় ঘটিয়ে তিনি সভ্যতার আকাশকে করেছিলেন মেঘমুক্ত। উদ্বোধন করেছিলেন সত্য ও ন্যায়ের এক ঐতিহাসিক যুগের। বিশ্ব ইতিহাসে এটা এত বড় র্কীতি ও কৃতিত্ব যার উদহারণ দ্বিতীয়টি আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। ইতিহাসের আলোকে তাই তিনি এক ক্ষণজন্মা, মহান, কর্মতৎপর, দূরদ্রষ্টা, সত্যসন্ধ মহাপুরুষ হিসেবে প্রশংসিত, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়-বরণীয়। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার মতো প্রকাশনাও র্দ্ব্যথহীন ভাষায় স্বীকৃতি প্রদান করেছে যে, ‘জগতের সকল ধর্ম প্রবর্তক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনিই হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা সফল।’
ইতিহাসে মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর অবস্থান যে কতটা গৌরবদীপ্ত তা বোধ হয় ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘মুহাম্মদের ধর্মই আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। অতঃপর মহানবী (সা.) এর অনুপম চরিত্র ও বহুমুখী প্রতিভায় আকৃষ্ট এবং অভিভূত হয়ে তিনি এই মর্মেও আশা প্রকাশ করেন যে, ‘সে সময় খুব দূরে নয় যখন সকল দেশের বিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের আমি একতাবদ্ধ করতে পারব এবং কুরআনের যে নীতিসমূহ একমাত্র সত্য এবং যে নীতিসমূহই মানুষকে সুখের পথে পরিচালিত করতে পারে সে সব নীতির উপর ভিত্তি করে এক সমরূপ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।’ মহানবী (সা.) সর্ম্পকে আরো একটি বলিষ্ঠ স্বীকৃতি উচ্চারিত হয় বিখ্যাত মনীষী টমাস কার্লাইলের কন্ঠে। ১৮৪০ সালে এডিনবার্গে আয়োজিত একটি সভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি ঘোষণা করেন যে, ‘শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, ঈশ্বর প্রেরীত দূত বা নবীদের মধ্যেও নায়কের স্থান অধিকার করে রয়েছেন সুদূর আরবের হযরত মুহাম্মদ (সা.)।’ অতঃপর তিনি তাঁর প্রাঞ্জল অনুপম ভাষায় আরো বলেন- ‘জগতের আদিকাল হতে আরবরা মরুভূমির মধ্যে বিচরণ করে বেড়াত এক অজ্ঞাত, অখ্যাত মেষপালক জাতি হিসেবেই। অতঃপর তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এমন একটা বার্তাসহ সেখানে এক ধর্মবীর পয়গম্বর প্রেরীত হলেন, আর অমনি যাদুর মতো সেই অখ্যাত জাতি হয়ে উঠল জগদ্বিখ্যাত, দীনহীন জাতি হয়ে গেল জগতের শ্রেষ্ঠ জাতি।
তারপর এক শতাব্দীর মধ্যে পশ্চিমে গ্রানাডা হতে পূর্বে দিল্লী পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হলো আরবদের আধিপত্য। সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর এক বিশাল অংশের উপর আরবদেশ মহাসমারোহে এবং বিক্রমের সাথে তার দ্যুতি বিকিরণ করেছে।’ ফরাসী দেশের অন্যতম শ্রেষ্ট পন্ডিত ও ইতিহাসবিদ প্রফেসর লা মার্টিন তার ‘তুরস্কের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘কার এমন ধৃষ্টতা আছে যে, ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের সাথে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর তুলনা করতে পারে? প্রায় সব বিখ্যাত মানুষেরা যদি কিছু অর্জন করেই থাকে তা তো জাগতিক শক্তি সামর্থ্য বৈ কিছুই নয়, যা প্রায় ক্ষেত্রে তাদের সম্মুখেই টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধুমাত্র সেনা বাহিনীই পরিচালনা করেননি, আইনই কেবল প্রণয়ন করেননি, রাজ্যই কেবল প্রতিষ্ঠা করেননি, জনসাধারণকেই কেবল সুসংগঠিত করেননি, কেবল খিলাফতের ধারাবাহিকতাই স্থাপন করেননি বরং তিনি সেই সময়কার জানা দুনিয়ার তিন ভাগের এক ভাগ অথবা ততোধিক জনপদের লাখ লাখ অধিবাসীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তাদেরকে উদ্ধার করেছেন কল্পিত দেব-দেবীর খপ্পর থেকে। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসে এনেছেন পরিবর্তন। বিকশিত করেছেন তাদের আত্মা ও মননকে।
একটি মহাগ্রন্থের ভিত্তিতে নির্মাণ করেছেন এক অনন্য আধ্যাত্মিক জাতীয়তা যা প্রত্যেক ভাষার মানুষকে, প্রত্যেক গোত্রের মানুষকে এক অনন্য ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করে। সেই মহাগ্রন্থের প্রতিটা অক্ষর পরিণত হয়েছে আইনে। দার্শনিক, সুবক্তা, রাসূল, আইন প্রনয়নকারী, বীরযোদ্ধা, নিরাকারের ইবাদত আনয়নকারী, কুড়িটি জাগতিক সাম্রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষের বিরাটত্ব ও মহত্ত¡ পরিমাপের তাবৎ মানদন্ড একত্র করে আমাদের শুধু একটিমাত্র প্রশ্নঃ তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কোন মানুষ কি আর কোথাও আছেন?’ লা মার্টিন আরো বলেন, ‘তিনি ছিলেন বিনম্র তবে নির্ভীক, শিষ্ট তবে সাহসী এবং সবসময় বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি ছিলেন সবচেয়ে সম্মানিত, সব চেয়ে উন্নত, বরাবর সৎ, সর্বদাই সত্যবাদী, শেষপর্যন্ত বিশ্বাসী এক প্রেমময় স্বামী, এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃতজ্ঞ পুত্র, বন্ধুত্বে অপরিবর্তনীয় এবং সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার, এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতচারী। কিন্তু তিনি কঠিন ছিলেন মিথ্যা শপতের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনী, কুৎসা রটনাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা- এ ধরণের লোকদের বিরুদ্ধে। ছিলেন ধৈর্য্য,বেদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত মহান আল্লাহ্র প্রার্থনা অনুষ্টানে এক মহান ধর্ম প্রচারক।’
জার্মানীর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ পন্ডিত ড. গুস্তাভ উইল মহানবী(সা.) কে বিশ্বে আইনপ্রণেতা ও সমাজ সংস্কারের মূর্তপ্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্য একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ স্টানলি লেনপুল বলেছেন, ধর্ম ও সাধুতার প্রচারক হিসেবে মুহাম্মদ (সা.) যে রকম শ্রেষ্ঠ ছিলেন, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও ছিলেন অনুরূপ শ্রেষ্ঠ। তিনি অদ্ভুত শক্তিতে, হৃদয়ের উষ্ণতায়, অনুভূতির মাধুর্য ও শুদ্ধতায় ছিলেন বিশিষ্ট। জীবনে কাউকে তিনি আঘাত করেননি। তিনি [হযরত মুহাম্মদ (সা.)] বলেছিলেন, ‘কাউকে অভিশাপ দেয়ার জন্য আমি প্রেরিত হয়নি, প্রেরিত হয়েছি বিশ্বজাহানের আর্শীবাদ স্বরূপ।’ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গিবন বলেন, ‘আশ্রয়প্রার্থীর জন্য বিশ্বস্ততম রক্ষাকারী ছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। কথাবার্তায় সবচেয়ে মিষ্টভাষী, সবচেয়ে মনোজ্ঞ, তাঁকে যারা দেখেছেন তারা আবেগাপ্লুত হয়েছেন অপ্রত্যাশিতভাবে। যারা কাছে এসেছেন তারা তাঁকে ভালোবেসেছেন। পরে তারা বলেছেন তাঁর মতো মহামানব আগে কখনো দেখেনি, পরেও না। মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিশক্তি ছিল গভীর, তাঁর রসিকতা ছিল শালীন। তাঁর কল্পনা ছিল উন্নত ও মহৎ। তাঁর বিচারবুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ। জাগতিক শক্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেও মুহাম্মদ (সা.) নিজ গৃহের কাজগুলোও করতেন নিজ হাতে। তিনি আগুন জ্বালাতেন, ঘর ঝাড়– দিতেন, দুগ্ধ দোহন করতেন এবং নিজ হাতে কাপড় সেলাই করতেন।
তাঁর আনীত ধর্ম বিধান সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য।’ লেবাননের হিট্টি বংশীয় প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মার্কিনমুল্লুকে অধ্যাপনায় প্রশংসিত প্রফেসর ফিলিপ কে হিট্টি আরবজাতি ও আরবদেশ সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ অনেকগুলো ইতিহাস গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) তাঁর স্বল্পপরিসর জীবনে অনুল্লেখযোগ্য জাতির মধ্য হতে এমন একটি জাতি ও ধর্মের গোড়াপত্তন করলেন যার ভৌগলিক প্রভাব খ্রীষ্টান ও ইহুদীদেরকেও অতিক্রম করলো। মানবজাতির বিরাট অংশ আজও তাঁর অনুসারী। অমায়িক ব্যবহার, অনুপম ভদ্রতা ও মহৎ শিক্ষার দ্বারা তিনি আরব জাতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। মহত্ব, সহানুভুতি ও বদান্যতার মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেন। তিনি ন্যায়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কখনো ন্যায়নীতি ও পূণ্যতার পথ পরিহার করেননি। তিনি কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেননি বা কাউকে প্রতারিত করেননি। এমনকি তাঁর আজীবন শত্রæ যারা তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল এবং সমগ্র আরব জাতিকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল, চড়ান্ত বিজয়ে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি কখনো কাউকে শাস্তি দেননি। সমগ্র দেশের শাসনকর্তা হয়েও তিনি আগের মতোই দরিদ্র জীবনযাপন করতেন। ফলে মৃত্যুকালে তাঁর উত্তরসূরীদের জন্য কিছুই রেখে যাননি।’
মহানবী (সা.) এর আদর্শকে মহান আল্লাহ্্পাক নিজেই বলেছেন- উসওয়াতুন হাসানা; অর্থাৎ সুন্দরতম আর্দশ। তাঁকে আল্লাহ্পাক সিরাজাম মুনীরা বলেও অভিহিত করেছেন যার অর্থ হল উজ্জ্বল প্রদীপ। অন্যদিকে পৃথিবীর বড় বড় অমুসলিম মনীষীরা পর্যন্ত মহানবী (সা.) এর কর্মবহুল বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে তাঁকে সর্বকালের শ্রেষ্টতম মহামানব হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। লিও টলষ্টয় মহানবী (সা.) এর বিশাল কর্মজীবনে কতটা মুগ্ধ ছিলেন তা তাঁর মন্তব্য থেকে বুঝা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি মুহাম্মদের নিকট হতে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর আর্বিভাবের পূর্বে পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি সেই অন্ধকারে দীপ্ত বহ্নির মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিলেন। আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মদের শিক্ষা ও দ্বীন ছিল যর্থাথ।’ খ্যাতনামা দার্শনিক ও হিন্দুধর্মের নেতা স্বামী বিবেকানন্দ বলেন. ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সাম্যের, মানবতার ও সৌভ্রাতৃত্বের সুমহান দূত।’ ১৯৩৬ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে দেয়া এক শুভেচ্ছা বাণীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘যিনি মহত্ত¡মদের মধ্যে অন্যতম, সেই পবিত্র পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উদ্দেশ্যে আমি আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
মানুষের ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনাময় জীবনীশক্তির সঞ্চার করেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি এনেছিলেন নিখাঁদ, শুদ্ধ ধর্মাচরণের আদর্শ।’ জর্জ বার্নাড শ বলেছেন : ‘আমি ভবিষ্যৎ বাণী করছি যে, আগামীতে মুহাম্মদ (সা.) এর বিশ্বাস (ধর্ম) ইউরোপের কাছে গ্রহণীয় হবে যেমনটা তা ইতিমধ্যেই ইউরোপের কাছে গ্রহণীয় হতে শুরু করেছে।’ প্রখ্যাত মার্কিন জ্যোতিবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক মাইকেল এইচ হার্ট বিশ্ব ইতিহাসের বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তির জীবনচরিত পর্যালোচনা করে তাঁদের মধ্য থেকে সর্বকালের সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী একশতজন সেরা ব্যক্তিত্ব বাছাই করে তার ‘ঞযব ঐঁহফৎবফ ” গ্রন্থে তাঁদের নাম, সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং মানবসভ্যতায় তাঁদের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের বিষয় আলোচনা করেছেন। এসব সেরা মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্পী প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণির খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। তার এই গ্রন্থে নির্বাচিত এসব সেরা মানুষদের তালিকায় সৃষ্টিকুলের সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে শীর্ষে স্থান পেয়েছে মহানবী (সা.)। মনীষী মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর ‘ঞযব ঐঁহফৎবফ” গ্রন্থে বলেন, ‘মুহাম্মদকে আমি বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী মনীষীদের তালিকায় শীর্ষেস্থান দিয়েছি, এতে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি ধর্মীয় ও ধর্মবর্হিভূত উভয় ক্ষেত্রে একযোগে বিপুলভাবে এবং সর্বাধিক সফলকাম হয়েছেন।’
ইংরেজ কবি জন কীটস্ বলেন, ‘পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবী মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।’ এভাবে আমরা দেখতে পাই জন ডেভেন পোর্ট, ডা. স্যামুয়েল জনসন, প্রফেসর স্টিফেন্স, জন উইলিয়াম ড্রেপার, ওয়াশিংটন আরভিং, এডওয়ার্ড মুনন্ট, রেভারেন্ড ডবিøউ স্টিফেন, রেমন্ড এলিয়ন নিকলসন, পি.কে. হিট্টি, জেমস্ এ মিসেনার, আর্থার গিলমান, মরিস গড ফ্রে, টি ডবিøউ আরনল্ড, ষ্টানলি লেনপুল, বসওয়ার্থ স্মিথ, মেজর আর্থার লিউনার্ড, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, জর্জ বার্নার্ড শ, বার্ট্রেন্ড রাসেল, টমাস কার্লাইল, ডঃ গুস্তাভ উইল, এ্যানি বেসান্ত, স্যার গোকুল চন্দ্র, জোসেফ হেল, ড. গেসটাউলি, আলফ্রেড মার্টিন, রর্বাট বিফ্রো, এডমন্ড বার্ক, লা মার্টিন, ক্যাডফ্রে হেগেল, মানবেন্দ্রনাথ রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুসহ পৃথিবীর অসংখ্য খ্যাতনামা ব্যক্তিগণ মহানবী (সা.) সম্পর্কে প্রশংসার বাণী উচ্চারণ করেছেন।
এসব বিশ্ববরেণ্য মনীষীগণ মহানবী (সা.) এর আদর্শ এবং জীবনের নানাবিধ কর্মকান্ডের ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ করে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুন্দরতম চরিত্র, অনুপম আদর্শ, নির্ভীকতা ও সহনশীলতার মাধুর্য দেখে। তাঁর সততা, কতর্ব্যপরায়ণতা, ন্যায়নীতি, ক্ষমা, দয়া এবং নিষ্ঠা দেখে তাঁরা অভিভূত হয়ে পড়েন।সর্বোপরি তাঁরা এটাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আদর্শই মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ, যা বিশ্বশান্তিকে নিশ্চিত করতে পারে।
লেখক : গবেষক, কলাম লেখক এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
পূর্বকোণ/এএইচ