ঈদুল আজহা বা কোরবানির দিন মুসলিম উম্মাহর অন্যতম ঈদ বা উৎসব। এ দিনকে দুনিয়া ও আখিরাতে অর্থবহ করে তুলতে আমাদের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। হাজি সাহেবগণ যেমন কোরবানি দেয়ার পর চুল ও নখ কাটে তেমনি সকল কোরবানিদাতাও নিজ কোরবানি দেয়ার পরই চুল ও নখ কাটবে। এতে প্রচুর সাওয়াব রয়েছে।
ইয়াওমে আরাফা তথা জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ একটি রোজা রাখবে তাতে এক বছর আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়। পবিত্রভূমি মক্কায়ে মুকাররমায় হাজিরা যেভাবে ইহরাম বাঁধার পর তালবিয়া পাঠ করে তেমনিভাবে ৯ জিলহজ্ব ফজর হতে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। তাকবীরে তাশরীক হচ্ছে,“ আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু; আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ্”।
পুরুষেরা উচ্চস্বরে আর মহিলারা মৃদুস্বরে এ তাকবীর উচ্চারণ করবে। নতুন ও পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিতে দিতে একপথে গমন করে অন্যপথে ফেরা সুন্নাত। মহানবী ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না কিন্তু ঈদুল আজহার সময় ঈদের নামাজের আগে কিছু খেতেন না। তাই আমাদেরও উচিত ঈদের নামাজের পর কোরবানি করেই কিছু খেতে যাওয়া।
কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য খোদাভীরু মন থাকা শর্ত। নির্ভেজাল চেতনা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোরবানি করতে হবে। আল কোরআনে এসেছে, “আল্লাহ তা‘য়ালার নিয়ম হল, তিনি আল্লাহভীরু পরহেজগারদের কর্মই গ্রহণ করেন”।
সকল দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে হতে হবে। সামাজিক লৌকিকতা ও অহমিকা থাকলে কোরবানিসহ কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। খালিছ নিয়তে ইবাদত করার লক্ষ্যে আল্লাহ পাক তার বান্দাদেরকে মুনাজাত শিখিয়েছেন, “বল, আমার নামাজ আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মরণ সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। তার কোন শরীক নেই, এ নির্দেশই আমাকে দেয়া হয়েছে আর আমি হলাম সবার আগে তার অনুগত-ফরমাবরদার। (সূরা আল-আনআম-১৬২-১৬৩)
কোরবানির তাৎপর্য সম্পর্কে আল কুরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে, ওসব (কোরবানির) পশুর রক্ত মাংস আল্লাহর দরবারে কিছুই পৌঁছে না বরঞ্চ তোমাদের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া -খোদাভীতি । (সূরা আল-হাজ্জ- ৩৭)
মূলত গোশত ও রক্তের নাম কোরবানি নয়, কোরবানি হল আল্লাহ তা‘য়ালার নির্দেশ পালন, আত্মত্যাগ ও সকল কুপ্রবৃত্তির উপর ছুরি চালানোর নাম। কালোবাজারি ও অসদোপায়ে অর্জিত সম্পদ দিয়ে কোরবান করলে তা গৃহীত হবে না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে “ আল্লাহ তা‘য়ালা হালাল বস্তু ছাড়া আর কোন কিছুই কবুল করেন না। (সহীহুল বুখারী)।
সাধারণত যাদের উপর জাকাত ফরজ তাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। জাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ মালামাল পুরো এক বৎসর বর্তমান থাকা শর্ত। তবে কোরবানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১, ১২ তারিখ মাগরিব পর্যন্ত সময় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেও কোরবানি করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হবে।
সামর্থবান ব্যক্তিকে কোরবানি করার জোর তাগিদ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্তে¡ও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের ধারে কাছেও না আসে। ( সুনানে ইবনে মাজাহ ও আহমদ)
নিজের কোরবানি নিজে করা সুন্নত। পরিবার ও মৃতজনের পক্ষ থেকেও কোরবানি করা যায়। কোরবানির পশু সবল, সুঠাম ও আকার-আকৃতিতে মানানসই হওয়া চাই। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা ও হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে “রাসুল (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটা তাজা মাংসে ভরা শিংযুক্ত ধূসর বর্ণের মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর দুটির একটি নিজ উম্মত, যারা তাওহীদের সাক্ষ্য দেয় এবং তার নবুয়্যতের প্রতি বিশ্বাস করে তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (ইবনে মাজাহ)।
সুতরাং আমাদের মাঝে যারা সক্ষম-সামর্থবান তাদের উচিত কোরবানি প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহর রেজামন্দি হাছিল করা এবং মহাপবিত্র ও ফজিলতময় এ দিনের যথার্থ কদর করা। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন
পূর্বকোণ/মাহমুদ