চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

সর্বশেষ:

দিন পেরিয়ে রাত পোহালেই ঈদ

রায়হান আজাদ

১৬ জুন, ২০২৪ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ইসলামি দিবসসমূহের মধ্যে এ দিনের তাৎপর্য অপরিসীম।

 

আরবি ‘কোরবান’ থেকে কোরবানি শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ। পশু কোরবানির মাধ্যমে এ দিনে বান্দা আত্মত্যাগ করত আল্লাহর নৈকট্য লাভে ব্রতী হয়। ফলে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে দ্বীনি আমেজে প্রাণস্পন্দন জেগে উঠে। ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব সৌহার্দ্য ও সহানুভূতির গভীর বন্ধনে শান্তির সুবাতাস নেমে আসে।

 

ঈদের জমায়েতে পারস্পরিক সালাম, কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ে অকৃত্রিম আত্মীয়তা জমে উঠে। সমাজের দীন হীন অনাথ এতিম ও হতাশ শ্রেণি একদিনের জন্য হলেও নিজেদের অধিকার ফিরে পায়। অমলিন হৃদয়ে হাসিমুখে একে অপরের সাথে মিলিত হয়। সবাই সাম্যবাদের মর্মকথা হরহামেশা উচ্চারণ করলেও ঈদুল আজহা বা কোরবানির দিন সর্বসাধারণ কোরবানির গোস্ত প্রাপ্তির মাধ্যমে তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। কোরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনে পাকের সবচেয়ে ছোট সূরা সূরায়ে আল কাওছারে ফরমায়েছেন, অতএব তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশে নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।

 

কোরবানি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবুল হয় না। নিবেদিত প্রাণ, গভীর আন্তরিকতা ও ইসলামী শরিয়তের প্রতি অগাধ আস্থা সহকারে কোরবানি পেশ করতে হবে।

 

পৃথিবীতে ধর্মকর্মের ইতিহাস যত প্রাচীন কোরবানির ইতিহাসও তেমনি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানবজাতির জন্য আল্লাহ পাকের তরফ থেকে যত শরীয়ত নাজিল হয়েছে প্রত্যেক শরীয়তে কোরবানির হকুম বিদ্যমান ছিল। সকল উম্মতের এ ছিল ইবাদতের এক অমোঘ বিধান।

 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানের এক রীতিনীতি নির্ধারণ করেছি যেন তারা ঐ সব পশুর উপর আল্লাহ পাকের নাম নিতে পারে যে সব তিনি তাদেরকে দান করেছেন। -(সূরা আল-হজ্জ-৩৪)।

 

কোরবানির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়, আদিপিতা হজরত আদম (আ.) এর সন্তান হাবিল ও কাবিল প্রথম কোরবানি করেন। তখনকার সময় প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান জমজ হিসেবে জন্ম গ্রহণ করত এবং তারা পরস্পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত না। দেখা গেছে, হাবিলের সহোদর হিসেবে যে কন্যাটি ভূমিষ্ট হয়েছে তা কালো ও অসুন্দর। আর কাবিলের সহোদর বোন ছিল খুবই রূপসী ও মায়াবতী। শরীয়তের বিধান অনুসারে কাবিলকে হাবিলের সহজাত বোন আর হাবিলকে কাবিলের সহজাত বোন বিয়ে করতে হবে। এতে কাবিল রাজি না হওয়ায় বিবাদের সৃষ্টি হয়।

 

অতঃপর উভয়ের পিতা হজরত আদম (আ.) হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার জন্য বললেন, ‘তোমরা উভয়ে সামর্থানুযায়ী আল্লাহ তা‘য়ালার উদ্দেশ্যে কোরবানি পেশ কর। যার কোরবানি কবুল হবে সে কাবিলের সহজাত বোন রূপ লাবণ্যে শ্রেষ্ঠ আকলিমাকে বিয়ে করতে পারবে’।

 

এ ঘটনার সত্যায়নে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আর তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের ঘটনা শুনিয়ে দাও, যখন তারা দুইজনেই কোরবানি করলো, তখন তাদের একজনের কোরবানি কবুল হলো অপরজনের কোরবানি কবুল হলো না। (সূরা আল-মায়েদা – ২৭)

 

আল কুরআনে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হিসেবে ভূষিত করা হয়েছে আর কোরবানি তারই অন্যতম সুন্নাত, আদর্শ। বর্তমানে আমাদের সমাজে যে কোরবানি প্রথা চালু আছে তার সাথে যে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে তা আল কোরআনের সূরা আস্ সাফ্ফাতের ১০২-১১২ আয়াতে কারিমায় সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে, যখন সে (ইসমাঈল আ.) তাঁর সাথে চলাফেরার বয়সে পৌঁছলো তখন একদিন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললোঃ প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে যেন জবেহ করছি। বল, দেখি কি করা যায়? পুত্র বিনা দ্বিধায় বললো, আব্বা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা শীঘ্রই পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে অবিচল দেখতে পাবেন। অবশেষে পিতাপুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের সোপর্দ করলেন এবং ইব্রাহীম (আ.) পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (জবেহ করার জন্য) তখন আমরা তাকে আহ্বান করে বললাম, ইবরাহীম তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমরা সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট অগ্নিপরীক্ষা। আর আমরা বিরাট কোরবানি ফিদ্য়া স্বরূপ দিয়ে তাকে (ইসমাঈল আ.) উদ্ধার করেছি। আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের জন্য ইব্রাহীমের এ সুন্নাতকে স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহীম (আ.) এর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে জীবনদানকারীদেরকে আমরা এ ধরনের প্রতিদানই দিয়ে থাকি। নিশ্চিতরূপে সে মুমিন বান্দাদের মধ্যে শামিল।

 

তাফসিরে এসেছে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) তদীয় পুত্র ইসমাঈলকে (আ.) জবেহ করতে বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ মনোরথ হলে ছুরি হাত থেকে ফেলে দেন। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আ.) ঐশী প্রত্যাদেশে হযরত ইসমাঈল (আ.) এর বদলে কোরবানির জন্য একটি দুম্বা নিয়ে হাজির হলেন। এভাবে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর আদর্শের অনুসরণে মুসলিম সম্প্রদায় কোরবানি প্রথা অদ্যাবধি জারি রেখেছে।

 

আয় আল্লাহ ! আমাদেরকে মহানবীর উম্মত হিসেবে হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর মিল্লাতের উপর শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখুন, আমিন।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট