চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল ক্বদর সমাগত

রায়হান আজাদ

৪ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত্রি হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। ইসলামে এ রাত্রির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কুরআনুল কারিমে এ রাতের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক একটি ছোট্ট সুরা নাজিল করেছেন।

 

লাইলাতুল ক্বদর রমজান মাসে হওয়ায় পুরো মাসের মর্তাবাও অনেকখানি বেড়ে গেছে। সুরাতুল ক্বদরে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ইরশাদ করেন, “১. আমি একে (আল কুরআনকে) নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে। ২. হে নবী, আপনি কি লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন? ৩. লাইলাতুল ক্বদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত। ৪. এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রুহ (জিবরাইল আমিন) অবতীর্ণ হন তাঁর পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। ৫. এ রাতের প্রত্যেকটি বিষয়ে রয়েছে শান্তি ; ভোরের উদয় পর্যন্ত এ রজনী বিদ্যমান থাকে। ”

 

এ সুরাটি নাজিলের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। একদা হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের কাছে বনি ইসরায়েলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে মশগুল থাকেন। কখনো অলসতা পোষণ করেননি। মুসলমানগণ এ কথা শুনে বিস্মিত হলে সুরা ক্বদর নাজিল হয়।

 

অন্য একটি বর্ণনা মতে, বনী ইসরাইলের চারজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি প্রত্যেকে ৮০ বছর ধরে সর্বক্ষণ আল্লাহ পাকের ধ্যানে কাটান। এ কথা শুনে সাহাবায়ে ক্বেরাম বিস্ময় ও হতাশা ব্যক্ত করেন। কারণ তারা সে জামানার ইবাদতকারী লোকদের মত দীর্ঘ হায়াত লাভ করেন না। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন নাজিলের এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম ঘোষণা দিয়ে আলোচ্য সুরাটি নাজিল করেন।

 

লাইলাতুল ক্বদরে আল কুরআন নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে একইভাবে আল কুরআনের সুরা দুখানে এসেছে, “হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয় আমি আল কোরআন নাজিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়”। ( সুরা আদ্ দুখান, আয়াত:০১-০৪) আল কুরআন প্রথম নাজিল হয় ৬১০ সালে মক্কা নগরীর জবলে নূরের গারে হেরায়। সে থেকে মহানবীর ২৩ বছর নবুয়তি জিন্দেগিতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে ধাপে ধাপে সমগ্র কুরআন নাজিল হয়।

 

লাইলাতুল ক্বদর তথা ভাগ্য রজনীর শব্দগত তাৎপর্য নিয়ে দুটি মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে ক্বদর অর্থ তাকদির এবং আদেশ আর কেউ বলেছেন, ক্বদর মানে মহাত্ম ও সম্মান। দুটি অর্থই বিশ্লেষণ করে বলা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তি ইতিপূর্বে ইবাদত বন্দেগি করে ক্বদর বা সম্মানের অধিকারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সে ব্যক্তি এ রাতে তাওবা- ইস্তিগফার-অনুশোচনা এবং ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক ইবাদত করলে ক্বদর বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে।

 

ক্বদর শব্দের অর্থ তাকদির বা আদেশ হয়ে থাকে। তা এজন্য যে, এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। এতে বান্দার রিজক, বয়স, জন্ম-মৃত্যু-বৃষ্টি সবই লিখে দেয়া হয়। প্রধান প্রধান ফিরিশতাগণ এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। হযরত ইবনে আব্বাসের মতে : চারজন ফেরেশতাকে এসব কাজ সোপর্দ করা হয়। তারা হচ্ছেন : ইসরাফিল, মিকাইল, আজরাইল ও জিবরাইল (আ.)। ক্বদরের তৃতীয় আরেকটি অর্থ সংকীর্ণ হওয়া। এ রাতে পৃথিবীতে এত অসংখ্য ফেরেশতা আসেন যে পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা যেন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, এজন্য এ রাতকে ক্বদর রাত্রি বলা হয়। এ রাত্রি নিয়ে আমাদের আরো অধ্যয়ন করতে হবে এবং সেটি খোঁজার জন্য উঠে পড়ে লেগে যেতে হবে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট