চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয় যে জীবনধারা
ফাইল ছবি

জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয় যে জীবনধারা

অনলাইন ডেস্ক

২৯ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে মক্কা থেকে) মদীনায় এলেন তখন লোকেরা তাঁর নিকট যেতে লাগলো এবং বলাবলি হতে লাগলো- আল্লাহর রাসুল এসেছেন, আল্লাহর রাসুল এসেছেন,আল্লাহর রাসুল এসেছেন (তিনবার)। আমিও লোকজনের সাথে (তাঁকে) দেখতে গেলাম। আমি তাঁর মুখমণ্ডল উত্তমরূপে দেখার পর বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা মিথ্যাবাদীর নয়। সর্বপ্রথম তাঁর মুখে আমার শোনা কথা এই যে, তিনি বললেন: হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামায পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। -(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৫১)

 

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

 

১. হাদিসের বাক্য “ তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো” এর অর্থ হচ্ছে- ‘মুসলমানদের মাঝে “আসসালামু আলাইকুম” বলার প্রচলন করো। কারণ সালাম শুধু একটি শুভেচ্ছা নয়; বরং এটি দোয়া, ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও ভ্রাতৃত্বেরও প্রতীক। পবিত্র কোরআনের সুরা নূরের ৬১ নং আয়াতেও সালাম দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা সালামের প্রভাব ব্যাপক। সালাম মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ কমায়, ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করে, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে।

 

২. হাদিসের বাক্য “আহার করাও” এর অর্থ হচ্ছে- ‘ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, অতিথি আপ্যায়ন করা, দরিদ্র-অসহায়কে সাহায্য করা।’ কোরআনের সুরা দাহরের ৭-৮ নং আয়াতের ভাষ্য মতে- “তারা আল্লাহর ভালোবাসার কারণে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে খাদ্য প্রদান করে। ”

 

অন্যকে আহার করানোর প্রভাবও ব্যাপক। এর দ্বারা সমাজে ক্ষুধার অবসান ঘটে, পারস্পরিক দয়া-মমতা বৃদ্ধি পায়, এবং এটি কিয়ামতের দিনে মহান আমল হিসেবে ওজনদার হবে।

 

৩. হাদিসের বাক্য “আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো” এর অর্থ হচ্ছে- ‘রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, সাহায্য করা, এমনকি তারা সম্পর্ক ছিন্ন করলেও পুনরায় সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া ‘ পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার এক নং আয়াতের ভাষ্য মতে- “আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরকে অনুরোধ করো এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করো না।” আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখার প্রভাবও অনেক বেশি। কারণ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে জীবনে বরকত আসে, রিজিক বৃদ্ধি হয় এবং আয়ু দীর্ঘ হয় (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

 

৪. হাদিসের বাক্য “লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামায পড়ো” এর অর্থ হচ্ছে- ‘তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইল পড়ো। এ নামায বান্দার সাথে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি করে।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, “রাতের শেষ প্রহরে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটে থাকে।” (তিরমিযী)

 

রাতের নামাজের প্রভাব: রাতের নীরবতায় ইবাদত বান্দাকে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি খাঁটি ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়।

 

৫. হাদিসের বাক্য “শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো” এর অর্থ হচ্ছে- পূর্বের চারটি কাজ অর্থাৎ- ১. সালামের প্রসার, ২. আহার করানো, ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক, ৪. রাতের নামায। এই সবগুলো একত্রিত হলে মানুষ একদিকে সমাজে শান্তি আনে, অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে। আর শেষ পুরস্কার হলো জান্নাত।

 

এই হাদিস আসলে ইসলামের সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিককে সমন্বিত করে। সমাজে শান্তি, মানবসেবা, পারিবারিক বন্ধন এবং ব্যক্তিগত ইবাদত। এই চার ভিত্তির উপর গড়ে ওঠে একজন পূর্ণাঙ্গ মুসলমানের জীবন। আর এ জীবনধারাই জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয়।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট