চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

তাওবার মাধ্যমে কবিরা গুনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে

রায়হান আজাদ

২ এপ্রিল, ২০২৪ | ১:২৮ অপরাহ্ণ

তাওবা অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। ইসলামের পরিভাষায় তাওবা হচ্ছে- বান্দা কৃত অপরাধের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার কামনা করত সত্য-সঠিক পথ তথা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধানের দিকে ফিরে আসা। গুনাহ মাফ করতে পারা রমজানুল মোবারকের বড় সাফল্য। কবিরা গুনাহ তথা বড় বড় গুনাহ থেকে মাফ পেতে হলে অবশ্যই তাওবা করতে হবে। হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, শিরক তথা আল্লাহ পাকের সাথে যেকোন কিছুকে যেকোনভাবে অংশীদার মনে করা, ধর্ষণ-ব্যভিচার, হত্যা-অপহরণ, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু-টোনা, মদ-জুয়া, সতীসাধ্বী নারীর চরিত্রে অপবাদ লেপন প্রভৃতি কবিরা গুনাহ। এসব গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হবে না।

 

তাওবার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা আন নুর-৩১) অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না? তারা তাদের গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ পরওয়ারদেগার তো ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’ (সুরা মায়েদা-৭৪) তাওবা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মুমিন ব্যক্তি নিজের পাপরাশিকে মনে করে যেন সে কোন পতনোন্মুখ পাহাড়ের তলদেশে বসে আছে, যা সহসা তার উপর ভেঙে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ তার গুনাহসমূহকে মনে করে নাকের উপর পতিত হওয়া একটা মাছির মতো (অত্যন্ত মামুলি ব্যাপার), যা হাত দিয়েই তাড়িয়ে দেয়া যায়।’

 

মিশকাত হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ কোন নির্জন ভ‚মিতে তার হারানো ঘোড়া খুঁজে পেলে যতটা খুশি হয়, বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ পাক তার চাইতে অনেক বেশি খুশি হন। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক বাহু এগিয়ে যাই, সে আমার দিকে এক বাহু এগিয়ে এলে আমি তার দিকে দু’বাহু এগিয়ে যাই, সে আমার দিকে হেঁটে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’

 

তাওবা করার নিয়ম হচ্ছে- পাক-পবিত্রতা হাসিল করে বান্দাকে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর শাহী দরবারে নিজের কৃত অপরাধ উপলব্ধি ও স্বীকার করতে হবে। অপরাধের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে অশ্রুপাত করতে হবে। বিনয়-নম্রতা সহকারে খালিস মনে ক্ষমা প্রার্থনা করত ভবিষ্যতে এ অপরাধ আর না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তাওবার জন্য কিছু কাফফারা-নফল নামাজ, নফল রোজা ও দান-সদকা করতে পারলে ভালো হয়।

 

মাহে রমজানের বাকি দিনগুলোতে আমরা যদি ইখলাসের সাথে তাওবা করি, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। তিনিই তো গুনাহগার বান্দাদের আশাবাদী করে বলেছেন, ‘যারা তাওবা করে ও নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং যা গোপন করেছিল তা প্রকাশ করে তাদেরকে আমি মাফ করে দেবো। প্রকৃতপক্ষে আমি তাওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু।’ (সুরাতুল বাকারা-১৬০) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘গুনাহ থেকে খাঁটি তাওবাকারী যেন নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো।’ (ইবনু মাজাহ) এ কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বান্দার হক যতক্ষণ পর্যন্ত সে মাফ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাকও তা মাফ করবেন না। তাই যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার সাথে যত দ্রুত সম্ভব মামলা খতম করে নিতে হবে। হে আল্লাহ পরওয়ারদেগার! আপনি আমাদেরকে যাবতীয় কবিরা গুনাহ থেকে খালিস নিয়তে তাওবা করে পাপমুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট