চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইতিকাফের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং এর সুন্নত আমলসমূহ

রায়হান আজাদ

৩১ মার্চ, ২০২৪ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

ইসলাম সর্বোত্তম ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এখানে যেমনি বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই, তেমনি গভীর আধ্যাত্মিক মনোনিবেশ ছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভেরও সুযোগ নেই। বান্দা তার স্রষ্টার সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য ইতিকাফ সর্বোত্তম পদ্ধতি।

 

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। সাধারণত মাহে রমজানের শেষ দশদিন তথা নাজাত দশকে মুমিন বান্দা সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদে নিয়ত সহকারে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ বিশদিন কিংবা এক মাসব্যাপীও হতে পারে। নিয়ত সহকারে তিনদিন কিংবা একদিন মসজিদে অবস্থান করলেও ইতিকাফ হিসেবে ধর্তব্য হবে।

 

আল কোরআনে ইতিকাফ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহ পাকের সীমারেখা। সুতরাং এর ধারেকাছেও যেয়ো না।’ (সুরা আল বাকারা-১৮৭) অন্যত্র এসেছে, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলের প্রতি আদেশ দিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (সুরা আল বাকারা-১২৫) উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরাবরই ইতিকাফ করেছেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’

 

উপরোক্ত আয়াতে কারিমা ও হাদিসে রাসুল দ্বারা বোঝা যায় যে, ইতিকাফ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মহল্লা বা সমাজের মসজিদে যদি প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে কয়েকজন ব্যক্তি ইতিকাফ পালন করে থাকে তাহলে সবার পক্ষ থেকে এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। মহিলারাও নিজেদের ঘরে নির্জনকক্ষে ইতিকাফ পালন করতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ধ্যান-জ্ঞান, ইবাদত-বন্দেগি ও তাসবি-তাহলিলে যেন কোনধরনের বিঘœ না ঘটে।

 

ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এতে অস্থির আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়। সংসার জীবনের শত সংকট ও সমস্যার মাঝে একাগ্রচিত্তে পরমাত্মা প্রভুর দরবারে আত্মবিলীন হতে পারলে যে সুখ অনুভূত হয়, তাই ইতিকাফে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যায়। ইতিকাফ যেমন যন্ত্রণাদায়ক দুনিয়াবি জীবন থেকে মুক্তির সাধনা, তেমনি পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত এ জগত সংসারের সমস্ত দুঃখ-তাপ ও কষ্ট-ক্লান্তি ভুলে থাকার মানসিক শক্তি অর্জনের সবক। আত্মবিশ্বাস ও আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করতে চাইলে ইতিকাফের বিকল্প নেই।

 

ইতিকাফের দিনগুলো রমজানের নাজাত দশকের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এদিনসমূহে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ-অনুভূতি উজাড় করে আল্লাহ তায়ালার শাহী দরবারে ধরনা দিতে হবে। মাঝরাতে আরামের ঘুম পরিহার করে দোয়া-দরুদ পাঠ করত অকুণ্ঠচিত্তে সিজদাবনত হয়ে অঝোর ধারায় কান্নাকাটি করে নাজাত লাভ করতে হবে। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমায়েছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেলো এবং নিজের গুনাহ মাফ করতে পারলো না, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক।’

 

মহানবী নিজের জীবনে ইতিকাফ করে উম্মতের জন্য অনুপম দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একবার সম্পূর্ণ কোরআন আবৃত্তি করা হতো। কিন্তু যে বছর তার ওফাত হয়, সে বছর দু’বার আবৃত্তি করা হলো। তিনি প্রতিবছর দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তার ওফাত হয়, সে বছর বিশদিন ইতিকাফ করলেন।’ (বুখারি শরিফ)

 

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসে ইতিকাফের কতিপয় সুন্নত আলোচিত হয়েছে। তা হচ্ছে- ১. ইতিকাফকারী পীড়িতের সেবা করবে না। ২. জানাজার নামাজে হাজির হবে না। ৩. স্ত্রীকে স্পর্শ কিংবা সহবাস করবে না। ৪. প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে যাবে না। ৫. রোজাদার ব্যতীত কেউ ইতিকাফ করবে না। ৬. জামে মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ হয় না। উল্লেখ্য, জামে মসজিদ মানে যেখানে জুমা এবং পাঞ্জেগানা নামাজ জামায়াতসহ আদায় করা হয়।

 

আসুন, দ্বান্দ্বিক জটিলতায় নিমজ্জমান দুনিয়ার এ জীবনে প্রকৃত শান্তি এবং পরকালীন নাজাতের লক্ষ্যে ইতিকাফের মতো আল্লাহর ধ্যানে নিজেদেরকে একনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত করি। আয় আল্লাহ! আপনি আমাদের হৃদয়ে ইবাদতের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করে দিন। আমিন॥

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট