চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বিদআত’র দুর্গন্ধ তৈরি

নাসির উদ্দিন

২৯ মার্চ, ২০২৪ | ২:২৩ অপরাহ্ণ

সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ দুইভাগে বিভক্ত। একদল নেতা,অন্যদল অনুসারী। বাস্তবতা হলো হয় নেতা, না হয়অনুসারী হতে হয়।এর বাইরে কোন পথ নেই। আল কোরআনেও তা নিয়ে আলোচনা।প্রথম মানুষ ও নবী আদম (আ.) থেকে শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব বিষয়ে আলোচনা আছে কোরআনে।তাই বলা হয়-কোরআন সম্পূর্ণ জীবন বিধান।যাতে ইহকাল-পরকালের কল্যাণ নিহিত। কোরআনের ভাষায় ফেরাউনের নাম পড়লে যেমনি সওয়াব হয়, তেমনি মুসা (আ.)এর নাম পড়লেও সওয়াব হয়। বরং মুসা (আ.)’র নাম থেকে ফেরাউনের নামে বেশি সওয়াব। ফেরাউনে ৫অক্ষর।প্রতি অক্ষরে ১০নেকি। এটা মনে করে ফেরাউন নাম জপ করলে ফেরাউনের দাদা ইবলিশ এসে বসবে।
তাই সওয়াব লক্ষ্য না।লক্ষ্য হলো আনুগত্য,দাসত্ব,ইবাদত। ইবাদত হলো সম্মানের শেষ প্রান্ত। মাথা ঝুঁকে দেয়া। সুতরাং এটা এমন সত্বার জন্য হতে পারবে,যেনি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আপনাকে দেবেন। প্রথম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো আমি–আপনি দুনিয়াতে আসা।দ্বিতীয়-বেঁচে থাকার জন্য নানা উপকরনের ব্যবস্থা করা। চূড়ান্ত নেয়ামত একমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন। তাই চূড়ান্ত ইবাদত আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য হতে পারে না। যিনি আসমানকে স্তম্ভ বিহীন রাখতে পারেন। সূর্যকে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় রাখতে পারেন। সেই ক্ষমতা একমাত্র আছে আল্লাহর। সেই কারণে ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ। তিনি আপনার অতীতে অবদান রেখেছেন,বর্তমানে রাখছেন ভবিষ্যত এমনকি পরকালেও রাখবেন। আমরা নি:স্ব অবস্থায় ছিলাম। সেখান থেকে দুনিয়ায় এলাম। বাঁচার জন্য আলো,অন্ধকার,পানি প্রয়োজনীয় খাবার–দাবার রিযিক সব কিছুর ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি।
তাই আল্লাহ বলেছেন, এসবের জন্য দরকার ন্যায়বিচারক শাসক। তাই আল্লাহ যে ৭শ্রেনীর মানুষকে কেয়ামতের দিন আরশে আজমের নীচে ছায়া দেবেন এক নম্বরে রেখেছেন এটি।ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফা আবু বকর(রা.)ও ওমর(রা:)’র দুটি ঘটনা থেকে আমার বুঝতে পারবো ন্যায়বিচারক শাসক কেমন।
মুহাম্মদ (সা.)এর প্রতি অতুলনীয় বিশ্বাসের জন্য আবু বকর (রা.)কে সিদ্দিক বা বিশ্বস্ত উপাধি প্রদান করা হয়।তাঁর কন্যা আয়িশা (রা.) ছিলেন মুহাম্মদ (সা.)এর স্ত্রী। তাকে “উম্মুল মু’মিনিন” বা “বিশ্বাসীদের মাতা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ধর্নাঢ্য আবু বকর (রা.)ইসলাম প্রচারে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন।তিনি ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী,তবে দুর্বল প্রকৃতির।মুহাম্মদ (সা.)যখন আবু বকর (রা.)কে প্রথম খলিফা করার বিষয় মনস্থির করেন।প্রথম বিরোধিতা করেন আয়িশা (রা.)।আয়িশা (রা.)তাঁর পিতা দুর্বল প্রকৃতির বলে মুহাম্মদ (সা.)বুঝাতে চান।কিন্তু মুহাম্মদ (সা.) তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
মুহাম্মদ (সা.)এর মুত্যৃর পর খলিফা হন আবু বকর (রা.)।দায়িত্ব পেয়ে মুসলিম উম্মাহর এই নেতা সব সময় আল্লাহকে বেশি ভয় করতেন।ওই জন্য তাঁর চোখে ঘুম আসতো না।যে আবু বকর (রা.)ক্ষমতায় আসার আগে মোটা-তাজা ছিলেন।সেই আবু বকর(রা.)ক্ষমতায় আসার পর শুকিয়ে কাঠ।কারণ চিন্তা। আজকে ফোরাতের তীরে যদি একটি ছাগলের বাচ্চা কিংবা কুকুরের বাচ্চাও না খেয়ে মারা যায় আল্লাহর দরবারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।তাঁর সম্পদ না বেড়ে উল্টো কমেছে।
একদিন প্রচন্ড গরমে ওমর (রা:)বের হলে পথে দেখা ওসমান (রা:)এর সাথে।ওসমান(রা:)জিজ্ঞেস করলেন,প্রচন্ড গরমে তিনি কেন বাইরে? ওমর(রা:)বায়তুল মালের একটা সদকার উট হারিয়ে গেছে,সেটির সন্ধানে বের হয়েছেন জানান। ওসমান(রা:)বললেন,আপনি চাইলে আরেকজনকে পাঠাতে পারতেন।তিনি বললেন,কেয়ামতের ময়দানে আমার দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করবে না।আমাকে জিজ্ঞেস করবে আল্লাহ, আমি কি জবাব দেব? তাহলে গরম কমলে বের হতেন এমন প্রশ্নে বলেন,দেরি করলে উটটি দূরে চলে যেতে পারে।কেয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে আমাকেই।
আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচারক শাসকের মর্যাদা দেখেন এক নম্বরে।যে জনগণের মাঝে সুবিচার,ইনসাফ করে।আমাদের নেতৃত্ব যখন আলাদা হলো।তখন কেউ বললো না যে, এটা একটা বিদআত।মিথ্যা যেমন সব পাপের মা।নেতৃত্বের গড়বড় যখন হয়,তখন ইনসাফ থাকে না।আল্লাহভীতি থাকে না,চরিত্র থাকে না,সব বিদআত সব হারাম একসাথে ঢোকে ।
আমরা যদি ঠিকমতো নেক আমল করি।আল্লাহর দাসত্ব করি, রাসূলের অনুসরণ করি সওয়াব এমনি আসবে।সওয়াব নিয়ে টেনশনের দরকার নেই।সওয়াব খুচরা পয়সা।কেউকি বলতে পারবেন কত সওয়াব হলে বেহেশতে যেতে পারবেন।সওয়াবের হিসাব বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন,কারণ এর কোন সীমা নেই্।অনেক সময় ভাংতি না থাকলে কাজে লাগবে।কিন্তু আসল টাকাটাতো থাকা লাগবে।আসল না রেখে ভাংতির পেছনে দৌড়াদৌড়ি করলে আমাদের সবাই ভিক্ষুক বলবে।
কিন্তু নেতা হতে হলে আসল টাকাটা থাকতে হবে।সাথে খুচরা থাকলে আলহামদুলিল্লাহ।কোন অসুবিধা নেই।শুধু খুচরা কালেকশনে লাভ হবে না,মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের মাথায় নিতে হবে।সব নবী-রাসূলরা বলছেন,কেবলমাত্র আল্লাহকে ভয় কর।আর আমাদের নেতৃত্বের অনুসরণ কর এটাই মুক্তি এর বাইরে কোন মুক্তি নেই।আজকে আমরা জীবনটাতে দুইভাগ করে ফেলেছি।আমরা নামাজ রোজা এসবের ভেতরে একশ্রেনীর লোকদের নেতা মানি।বান্দার হকের ব্যপারে যত কিছু আছে,এসব ব্যপারে আরেক শ্রেনীর লোককে নেতা মানি।
বিদআত’র জন্ম হলো কিভাবে? রাসূলের যুগে বিদআত ছিল না।খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে বিদআতের কোন দূর্গন্ধ আসেনি।নেতৃত্বের দ্বন্ধে বিদআত এসছে।যখন নেতৃত্ব আলাদা হয়েছে।দ্বীনও দুনিয়া আলাদা।দ্বীন চালাবে একধরেনের লোক, দুনিয়া চালাবে আরেক ধরণের লোক।এটাতো আসল বিদআত ।
কুয়ার ভেতর মরা বিড়াল রেখে ৭০০ বালতি পানি তুললেওতো পানি পাক হবে না।আগে বিড়ালটাকে তুলতে হবে।আমি একটা সুন্দর বাগান করলাম।একজনকে দায়িত্ব দিলাম।তুমি এই বাগানটা দেখা-শোনা করবে।আমি মাসখানেক পরে এসে দেখলাম বাগানে অনেক আগাছা।আমার রাগ কি আগাছার উপর হবে।নাকি মালির উপর হবে।তুই কাজ করিসনি বলেইতো আগাছা জন্মেছে।মালি যদি মনে করে আগাছাও আল্লাহর সৃস্টি।আবার সুন্দর ফুল,ফল গাছগুলোও আল্লাহর সৃষ্টি।আমি আল্লাহর এমন পরহেজগার বান্দা হিসেবে আগাছায় নিড়ানি দিতে পারি না,মারতে পারি না।তাহলে এই মালি কি খুব ভাল ও আদর্শ মালি।ও ফসলের জম।আগাছার সাথে ওর ভালবাসা।এর থেকে বড় পরহেজগার কে?
আমরা শয়তানকে বসাই বান্দার হক নেতৃত্বের আসনে।এরপর যদি দোয়া করি আল্লাহ তুমি আমাদের শান্তি দাও।ভাল দাও,জোর-জুলুম থেকে বাঁচাও।এসব একধরণের ঠাট্টা-মশকরা।আমরা নিজ হাতে বসাইছি কি? নাগরিকরা দায় এড়াতে পারে না।এটা মনে করলে হবে না,আমরা সাধারণ মানুষ।আমার কি করবো?এসব কথা না।আমরাতো ফ্যাক্টর এই ফেতনার মূল।ওরা আমাদের ধ্বংসের মূল।আমরাও ওদেরকে চেয়ারে চসানোর মূল।আমরা খানকায় মুত্তাকি খঁজি।কিন্তু রাষ্ট্রের মসনদে মোত্তাকি বসানোর কথা।
আজ ভিলেনরা নেতা।আমার তাদের সালাম দেই।তাদের শুভ কামনা করি।আমাদের কপাল পুড়বে না।আমরা আজ রাসূলের অনুসরণ করি জামায়,দাড়িতে,টুপিতে,মিষ্টি খাওয়ায়,জানাজায়,বিয়ে-সাদীর সামান্য দোয়ায়,কারণ আপনি বিয়ে দেবেন যৌতুকে।খুতবা পড়বেন এ হয়। কেউ যদি মদ খায় এটা হারাম।কাফের হবে না।কিন্তু যদি বিসমিল্লাহ বলে খায় তাহলে কাফের।কারণ সে বেয়াদব। সে এটাই বলতে চেয়েছে আল্লাহ তুমি মদ খেতে মানা করেছো তোমার নাম নিয়ে খাব।এই বেয়াদবির কারণে সে কাফের হয়ে যায়।আল্লাহর নাম ব্যবহার করে কোন হারাম কাজ করা হলে ইমান থাকে না কাফেরে পরিণত হয়।
আজ মুসলমানরা মুসলিম সংস্কৃতি বাদ দিয়ে খৃষ্টান সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠছে।এটাকে তারা আধুনিকতা,ফ্যাশন মনে করছে।এই নিয়ে গর্ববোধ করছে।বিয়ে-শাদি,জন্মদিন,সামাজিক কার্যক্রমে তাদের সংস্কৃতি লালন করছে,যা ইসলামে অনুমোদনহীন।খৃষ্টানরা বিশ্বে তাদের সংস্কৃতি মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ায় সফল । ইসলাম থেকে বের করে কিছু মুসলিম মাঝখানে থাকছে।তারা কোন ধর্মে নেই।এভাবে তারা একসময় নাস্তিকে পরিণত হয়।তারা আবার নিজেদের মুসলমান দাবি করে ইসলাম নিয়ে বিষোদগার করে। অর্থাৎ নামে মুসলমান কাজে নাফরমান।কিন্তু নাম রাখবে মুহাম্মদ,আবদুল্লাহ,ফাতিমা ও আয়েশা।নামে মুসলিম,পরিবার মুসলিম, প্রকৃতপক্ষে তাদের কোন ঈমান নেই।ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের মধ্যে সন্দেহ তৈরী করা তাদের কাজ।যাতে মুসলমানরা বিভ্রান্ত হয় এবং ওই বিধিবিধান মেনে আমল কম করে।
কারো যদি শরীরে ঘা থাকে,চিকিৎসকের পরামর্শমদো মলম লাগাতে হয়।মলম দিলে একটু জ্বলবে।আপনি যদি ঘা-টা শুকাতে চান তাহলে মলমটা লাগাইতে হবে।তাহলে ঘা-টা শুকাবে।অনুরুপভাবে আমাদের ইমান,নৈতিকতায়, চরিত্রে আজকে যে ঘা তৈরী হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে নেতৃত্বের বিপর্যয়ের কারণে হক কথা শুনলে আঁতে ঘা লাগে।এর চাইতে মাটির তলার কথা বললে ভালো।পৃথিবীর বাইরের কথা বললে ভালো।আপনি কেন এসছেন এখানে। আপনি পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা।নৈতিকতার মহারোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে দরকারি ওষুধ খেতে হবে।সময় এটাকে ভাল করে দেবে

লেখক: ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট