চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

আশুরার রোজার নিয়ম ও ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

২৮ জুলাই, ২০২৩ | ১১:০৫ অপরাহ্ণ

পৃথিবীর সৃষ্টি ইতিহাস থেকে শুরু করে হজরত আদম (রা.), ইবরাহিম (আ.), মুসা (আ.)সহ বহু নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত দিন পবিত্র আশুরা। ইসলামের ইতিহাসে কারবালার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনাও ঘটেছে এই একই দিনে। তাই মুসলিম জাতিসহ অন্য আহলে কিতাবদের কাছেও এই দিন বিশেষ মর্যাদা রাখে। জাহিলি যুগের কুরাইশরাও এই দিনকে সম্মান করত।

এই দিনের সম্মানার্থে তারা রোজা রাখত। এ ব্যাপারে আয়েশা (রা.) বলেন, জাহিলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন সওম পালন করত। মহানবী (সা.)-ও সেই সওম পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন তখনো তিনি সেই সওম পালন করতেন এবং অন্যদের পালনের নির্দেশ দিতেন।

এরপর যখন রমজান (সম্পর্কিত আয়াত) অবতীর্ণ হলো রমজানের সওম ফরজ হলো এবং আশুরার সওম বাদ গেল। এরপর যে চাইত সে ওই সওম পালন করত আর যে চাইত তা পালন করত না। (বুখারি, হাদিস : ৪৫০৪)
নিচে আশুরার রোজার ফজিলত ও নিয়ম তুলে ধরা হলো:

আশুরার রোজার ফজিলত : আশুরার রোজা মুমিনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এই দিনের রোজাকে কোনো কোনো হাদিসে রমজানের রোজার পর সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের রোজার পরে আল্লাহ তাআলার মাস মহররমের রোজাই সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪০)।

অন্য হাদিসে আরো ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহররম মাসে আশুরার রোজা।’ (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৮৪২১০)

অন্য হাদিসে এই রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই রোজার দ্বারা বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৩৮)

আশুরার রোজা কোন দিন: মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা দুটি। অর্থাৎ ১০ মহররমের সঙ্গে তাদের আরেকটি রোজা বাড়তি রাখতে হবে। ৯-১০ বা ১০-১১ যেকোনো পদ্ধতিতে আদায় করা যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, (মহররমের) দশম তারিখে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা পালন করতে আদেশ করেছেন। আবু ঈসা ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন। আলেমদের মধ্যে আশুরার দিন প্রসঙ্গে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ (মহররমের) ৯ তারিখের কথা বলেন, আবার অন্য এক দল ১০ তারিখের কথা বলেছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তোমরা ৯ ও ১০ (এই দুই দিন) রোজা পালন করো এবং (এই ক্ষেত্রে) ইহুদিদের বিপরীত করো। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৫)

একটি হাদিসে এমন পাওয়া যায়, আল্লাহর রাসুল (সা.) জীবনের শেষ বছর বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে মহররমের ৯ তারিখেও সিয়াম পালন করব।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫৭)

সাহরি-ইফতারে ভালো আয়োজন করা : আশুরার দিন রোজা রাখা যেমন সওয়াবের, তেমনি সাহরি ইফতারে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করাও সওয়াবের। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির, হাদিস : ১০০০৭; বায়হাকি, হাদিস : ৩৭৯৫)

এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে দুর্বলতা আছে। তবে ইবনে হিব্বানের মতে, এটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হাদিস। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর দাবি, রিজিকে প্রশস্ততার ব্যাপারে কোনো হাদিস নেই। এটি ধারণাপ্রসূত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন, এটি বিশুদ্ধ হাদিস নয়। তবে এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা থাকার কারণে ‘হাসান’ হওয়া অস্বীকার করা যাবে না। আর ‘হাসান লিগাইরিহি’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আমল করা যায়। (আস-সওয়াইকুল মুহরিকা আলা আহলির রফজি ওয়াদ দালাল ওয়াজ জানদিকা : ২/৫৩৬) সৌজন্যে কালের কণ্ঠ 

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট