এ-কূল ভাঙে ও-কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা। সকাল বেলা আমির, রে ভাই (ও ভাই) ফকির, সন্ধ্যাবেলা। নদী মাতৃক এই বাংলাদেশে এ খেলা আবহমান কাল থেকেই চলমান। এতে কোথাও ভূখণ্ড যোগ হচ্ছে, আবার কোথাও বিয়োগ হচ্ছে। যোগে আনন্দ আছে, কিন্তু বিযোগে আছে জীবনযন্ত্রণার করুণ আর্তনাদ।
এহেন যোগ-বিয়োগের আনন্দ-বেদনার আশীর্বাদ ও অভিশাপ নিয়ে জীবনতরী বয়ে চলছে লোহাগাড়া উপজেলার নদী ও খাল পাড়ের পরিবারগুলোর। জীবন-যন্ত্রণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেক নদী ও খাল পাড়ের বাসিন্দারা। নদী ও খালের ভাঙনে আতঙ্কে তাঁরা যেমন দিশেহারা একইভাবে বর্ষার প্লাবনে ভরাট ছড়াগুলোর জলাবদ্ধতায় তাঁদের ওপর নেমে আসে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
লোহাগাড়া উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। সিংহভাগ লোক কৃষি নির্ভরশীল। পাশাপাশি রয়েছেন অন্য পেশার মানুষগুলোও। তবে, নদী-খাল-ছড়া বিধৌত লোহাগাড়া উপজেলা কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের চারণভূমি নামে খ্যাত। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে আমিরাবাদ, পদুয়া, চরম্বা, কলাউজান, পুটিবিলা, চুনতি, আধুনগর, লোহাগাড়া, বড়হাতিয়া প্রভৃতির ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। এসব ইউনিয়নগুলোর উপর বা পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী ও খাল এবং বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ভরাট হয়ে যাওয়া ছড়াগুলো।
নদী-খাল ও ছড়া বিধৌত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বর্ষায় ধারণ করে ভয়ঙ্কররূপ এবং খরা মৌসুমে নিয়ে আসে আশীর্বাদ। বিশেষ করে আমিরাবাদ ও কলাউজানে উপর দিয়ে বয়ে গেছে টঙ্কাবতী নদী। চুনতি, পুটিবিলা, আধুনগর ও আমিরাবাদের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডলু নদী। দু’টি নদী পূর্বে খাল হিসেবে পরিচিতি ছিল। সময়ের আবর্তন-বিবর্তনে বর্তমানে খাল দু’টি নদী নামে নামকরণ হয়েছে।
বর্ষায় টঙ্কাবতী নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়েছে অতীতে অনেক পরিবার। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বর্তমানেও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। তন্মধ্যে কলাউজানের মিয়াজী পাড়া, রসূলাবাদ পাড়া, তেওয়াখীল, ডেবারকূল, আমিরাবাদ ইউনিয়নে হাজারবিঘা, রাজঘাটা, ঘোনা পাড়া, মহুরী পাড়া, পাল পাড়া, মজুমদার পাড়া, জলদাশ পাড়া, তুলাতলী বাজার ও জলিলনগরসহ পাশের বিভিন্ন এলাকা। চরম্বা ইউনিয়নের নাফারটিলা সংলগ্ন বিশাল জনবসতি টঙ্কাবতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে পূর্বে গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এলাকার কালু মাস্টার জানান, ভাঙন সমস্যা খুবই ভয়ঙ্কর। যে কোন সময় সংশ্লিষ্ট স্থানের বিশাল জনবসতি নদীর গর্ভে ধসে বিলীন হতে পারে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
অপরদিকে, ডলু নদীর ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে পুটিবিলার এমচরহাট সংলগ্ন জনবসতি বড়ুয়া পাড়া, চুনতি ইউনিয়নস্থ মিয়া পাড়া, আধুনগর ইউনিয়নের পাল পাড়া, সিপাহী পাড়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের ডলুকূল, মাস্টার পাড়া, রোকেয়া বাপের পাড়া প্রভৃতি এলাকার অনেক পাড়ের বাসিন্দার বাড়িঘর অতীতে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং বর্তমানেও বিলীন হওয়ার সম্মুখীন অনেক জনবসতি। খরস্রোতা হাঙ্গর খালের ভাঙনে আতঙ্কিত জনবসতিগুলো হল পদুয়া ইউনিয়নের নাওঘাটার দোকানপাট ও তৎসংশ্লিষ্ট জনবসতি, পেঠান শাহ পুরাতন পাড়া, হাঙ্গর ব্রিজ সংলগ্ন বিশাল জনবসতি এলাকা।
লোকজন কূল ভাঙন আতঙ্কে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে যাচ্ছেন। এছাড়া পুটিবিলার পাশ দিয়ে সরইখাল, লোহাগাড়া ইউনিয়নের পাশ দিয়ে সুখছড়ি খাল, আধুনগর ও চুনতি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে হাতিয়ার খাল, চরম্বা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে জাংছড়ি, চুনতি ইউনিয়নের অপর পাশ দিয়ে চাম্বী, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের পাশ দিয়ে থমথমিয়া প্রভৃতি খালের বিভিন্ন এলাকার পাড়ের অধিবাসীরা ভাঙন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।
পূর্বকোণ/ইব