চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

বোয়ালখালী-রাঙ্গুনিয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ

কাটা হয়েছে অর্ধশত পাহাড়

পূজন সেন, বোয়ালখালী

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ২:৪৮ অপরাহ্ণ

বোয়ালখালীর জৈষ্ঠ্যপুরা থেকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটার দূরত্ব চার কিলোমিটার। আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পাহাড়ি এ পথ ঘুরে যেতে হলে দূরত্ব দাঁড়ায় ৮ কিলোমিটারে। এই পথে পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে কাটা হয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক পাহাড়। জৈষ্ঠ্যপুরার এই পাহাড়ি অঞ্চল বন্যহাতির অবাধ বিচরণক্ষেত্র। জৈষ্ঠ্যপুরা ভাণ্ডালজুড়ি খাল ও পাহাড়ি ছড়া থেকে বন্যহাতির পাল সুপেয় পানির চাহিদা মেটায়। তবে সড়ক নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলে বেড়েছে মানুষের বিচরণ এবং উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। ফলে বাড়ছে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব।

 

পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করলেও পাহাড় ধসে সড়কটি ফাটল এবং ভাঙনে বিপর্যস্ত। পাহাড়ি ঢলে মাটিধসের ফলে নির্মাণাধীন সড়কটি বেশ কয়েক দফায় সংস্কার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সংস্কারের পর সংস্কার করেও ব্যর্থ হওয়ায় শেষতক ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

 

এই সড়ক নির্মাণে পাহাড় কাটার বিষয়ে ছিল না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের শুরুতে সড়কটি নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার অনুমতি মৌখিকভাবে নেওয়া হয়েছিল। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, সড়ক নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার অনুমোদন কখনও দেওয়া হয় না।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন ফ্লাস ফ্লাড এরিয়া অফ চিটাগং ডিস্ট্রিক্ট রাঙ্গুনিয়া এন্ড বোয়ালখালী উপজেলা’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকার সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। নির্মাণব্যয় ধরা হয় ২৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

 

সড়কটির দৈর্ঘ্য ধরা হয় ৭ দশমিক ৫৮৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে। এই সংযোগ সড়কের জন্য বোয়ালখালী উপজেলার কালুরঘাট-শ্রীপুর খরণদ্বীপ-ভাণ্ডালজুড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার ও রাঙ্গুনিয়ার গুদামঘর থেকে পূর্বমুখী ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়।

 

তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কালুরঘাট থেকে ভাণ্ডালজুড়ি হয়ে গুদামঘর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ ও পুনঃমেরামত করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে জাপান ব্যাংক ন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) অর্থায়নে সড়কের উন্নয়ন করা হয়।

 

দেখা গেছে, বোয়ালখালী জ্যৈষ্ঠপুরা থেকে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা গুদামঘর পর্যন্ত স্থানীয় ছড়া এবং পাহাড়ের কোলঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। এতে কাটা পড়ে প্রায় ৪৫টি ছোট-বড় পাহাড়। বেশিরভাগ পাহাড় কাটা হয়েছে ৯০ ডিগ্রি খাড়া এঙ্গেলে। রাঙ্গুনিয়া অংশে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়েই তৈরি করা হয়েছে সড়ক। পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করা হলেও সড়কের পাশে ছড়া এবং খাদ থাকার কারণে সড়কটির বেশিরভাগ স্থানে ফাটল ধরেছে। এমনকি ভেঙে পড়েছে কয়েকটি স্থানের সড়ক।

 

ভাঙনের কারণে সড়কটির অনেক জায়গায় দেওয়া হয়েছে আরসিসি ঢালাই। খাড়াভাবে কাটা পাহাড় এখন ধসে পড়ছে সড়কে। সড়কে এক ধার ভেঙে যাওয়ায় পুনঃসংস্কার করতে হলে আবারও কাটতে হবে পাহাড়। সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল খুব একটা দেখা না গেলেও বেশিরভাগ অংশের উঠে গেছে কার্পেটিং।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট