প্রাচীনকালে ভারত-মিয়ানমার থেকে নিত্যপ্রয়োজনী মালামাল নিয়ে ডলু নদী হয়ে জাহাজ ভিড়তো ডলু ব্রিজের বাদশা মিঞা ও কালু মিঞার ঘাটে। কিন্তু গত ৩০ বছরের দখল-দূষণে মরে গেছে নদীটি, পানিশূন্য হয়ে জেগে উঠেছে চর। অথচ কেউ শুনছে না নদীটির কান্না। নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৬ মিটার গড় প্রস্থের এই নদী পার্বত্য বান্দরবান থেকে প্রবাহিত হয়ে লোহাগাড়ার কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে সাতকানিয়ায়। নদীটি সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন, সোনাকানিয়া ইউনিয়ন, সাতকানিয়া পৌরসভা, পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন, এওচিয়া ইউনিয়ন, আমিলাইশ ইউনিয়ন, নলুয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাঙ্গু নদীতে পতিত হয়েছে।
এই অঞ্চলজুড়ে স্থানীয়দের বাসাবাড়ির বর্জ্য, দোকানের ব্যবহৃত অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ডলু নদীতে। ফলে দ্রুতই ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি, বাড়ছে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ। ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ-ব্যাধি। দূষণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নদীর পানি। অন্যদিকে, নদীর নাব্যসংকট, অবৈধভাবে নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা দখলদারদের অট্টালিকা ও বালি উত্তোলনের যেন সমাধান নেই কারও কাছেই।
উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালের সার্জিকেল বর্জ্য, বিভিন্ন মাছ বাজারের ময়লা, বাজারে পচে যাওয়া সবজি, সাতকানিয়া পৌরসভা এলাকায় বসবাসরতদের নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি ফেলার কারণে নদীটি যেমন সরু হয়েছে, তেমনি পানির প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে; হারিয়ে ফেলেছে তার চিরচেনা রূপ ও যৌবন। সবার কাছে আজ নদীটি যেন শুধুই কালের সাক্ষী। সবমিলিয়ে ডলু নদীর বুকে ধু-ধু বালিচর। আর এসব চর এখন ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। নদী মরে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে মৎস্যসম্পদ। সেই সাথে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি ও পরিবেশে।
পাড়ঘেঁষে বেড়ে ওঠা বণিকপাড়ার জীবন চন্দ্র ধর বলেন, বহু আগে ভারত-মিয়ানমার থেকে মালামালভর্তি জাহাজ ডলু নদী হয়ে আমাদের বাদশা মিঞার ঘাটে ভিড়তো। বণিকরা সেখান থেকে প্রয়োজনী পণ্য ক্রয় করতো। এ ঘাটে আমরাও মালামাল আনতাম। আমাদের বণিকপাড়ায় বিভিন্ন ব্যবসা হতো। আমাদের বণিকপাড়া মূলত ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। ডলু ব্রিজে আরেকটি ঘাট ছিল, যেটির নাম কালু মিঞার ঘাট। পরে সাতকানিয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা সড়কপথ নির্ভর হওয়ায় নৌকার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া নদীতে ময়লা-আর্বজনা ফেলা ও নদী থেকে বালি উত্তোলনে নদীর স্রোতে ও নদীর পরিচয় হারিয়ে গেছে।
সাতকানিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের পূর্বকোণকে বলেন, ডলু নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগে উঠেছে। যার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই মুহূর্তে জরুরি ড্রেজিংয়ের আওতায় এনে নদী সংরক্ষণ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রয়োজন এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা। এছাড়া নদী দূষণের স্বীকার হচ্ছে। জনসংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে; আর ময়লা-আর্বজনার পরিমাণও বাড়ছে।
পূর্বকোণ/ইব