চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাঙামাটি

পূর্বকোণ প্রতিনিধি

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ২:০৪ অপরাহ্ণ

পার্বত্য রাঙামাটির জেলা শহর ও উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে ফেলেছে। এতে জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে, যে সমস্ত পাহাড়ে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যেত, সে সমস্ত পাহাড়ে ইতোমধ্যে দখল করা হয়ে গেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ফলে রাঙামাটিকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা বা পর্যটন হাব হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে।

 

রাঙামাটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও জনবসতি। নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় স্থাপনাও। একই সঙ্গে এখানে হ্রদের কিছু অংশ দখল করেও গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। বহুদিন ধরে এই জায়গায় বাস ও ট্রাক রাখা হলেও নানা জটিলতায় নিমজ্জিত টার্মিনালটির কার্যক্রম। গাড়ি পার্কিং করতে নানা সমস্যা। অপরিষ্কার ও খানাখন্দে ভরা জায়গাটি। বেদখল, সংস্কার না করা ও বিভিন্ন জটিলতার কারণে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই টার্মিনাল। সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে রাঙামাটির যাত্রী সাধারণ।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি সড়ক পরিবহন চালক সমবায় সমিতি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, শহরের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস রাখা, টিকিট সংগ্রহ করাসহ যাত্রীদের সব ধরনের সেবা দিতে ১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ১৯৯৪ সালে সমিতির নিজস্ব ৯.৮০ একর জায়গায় চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙামাটির শহরের ফিসারিবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় রাঙামাটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হয়। পরে নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকায় ২০০৭ সালে কাজ শেষ হয় এবং ২০১০ সালের দিকে টার্মিনালের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। জায়গা দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে ২০১২ সালে টার্মিনালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। বাসের থেকে ট্রাক বেশি রাখা হয়েছে এ বাস টার্মিনালে। যদিও পৌরসভার একটি ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে সবসময় ট্রাক রাখা হয়। এখন ট্রাক মালিকরা বাস টার্মিনালও ব্যবহার করছে। সমিতির নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গাটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয়া হয়।ফলে বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে টার্মিনালটি।

 

এ ব্যাপারে রাঙামাটির কয়েকজন যাত্রী হতাশা ব্যক্ত করে পূর্বকোণকে বলেছেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাস টার্মিনাল থেকে লাভবান হচ্ছে, বাস-ট্রাকের মালিকগণ, যাদের জন্য এই বাস টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছিল, সেই রাঙামাটির যাত্রী সাধারণের সুযোগ-সুবিধা বা লাভ হয়নি। বাস টার্মিনালটি বাস মালিক, ট্রাক মালিক ও সমিতি নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। অথচ, পর্যটন শহর রাঙামাটিতে পর্যটকদের বাসসহ অন্যান্য গাড়ি রাখার জায়গা না থাকায় যত্রতত্র পর্যটকবাহী গাড়ি রাখার ফলে শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

 

এদিকে, রাঙামাটি শহরে বাস টার্মিনালের মতো অবৈধভাবে যেসব জায়গা দখল হয়েছে, তন্মধ্যে কয়েকটি স্থান হলো, রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর এলাকা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এলাকা, কল্যাণপুরের কিছু এলাকা, কালিন্দিপুরের কিছু এলাকা, হ্যাচারি এলাকা, তবলছড়ির বিভিন্ন এলাকা, রিজার্ভ বাজারের কিছু এলাকা, ভেদভেদীর কিছু এলাকা, আসামবস্তি-রাঙাপানির কিছু এলাকা এবং শহরতলীর মানিকছড়ির কিছু এলাকা।

 

এভাবে রাঙামাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গাগুলো প্রভাবশালী ও ভূমিখেকোরা দখলে নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে শহরটিকে পরিকল্পিতভাবে একটি সুন্দর পর্যটন নগরী গড়তে প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধীরে ধীরে রাঙামাটি ঘিঞ্জি ও অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট