সীমান্ত সড়ক পশ্চাৎপদ পার্বত্যাঞ্চলকে উন্নয়নের ধারায় এনেছে ঠিকই, কিন্তু ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। রাজস্থলীর সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটির সূচনা হয় ২০১৯ সালে; মোট দৈর্ঘ্য ১০৩৬ কিলোমিটার। প্রথম পর্যায়ে একনেকে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আঁকাবাঁকা এই সীমান্ত সড়কে প্রায় ১৬০টি পাহাড় কাটা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের অংশ হিসেবে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। ভ্রমণপিপাসুদের পুরো পার্বত্য অঞ্চলের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দিচ্ছে এ সীমান্ত সড়ক। বদলে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চল। পার্বত্য অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রতিফলন হচ্ছে এই সীমান্ত সড়ক।
পার্বত্য জনপদকে দেশের অর্থনীতির মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সড়কটি। আধুনিকতার আশীর্বাদে এই দীর্ঘ সীমান্ত সড়কটি পাহাড়ি জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত সড়কটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শুরু হয়ে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা সদর, সেখান থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া এবং সেখান থেকে জুরাইছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা হয়ে মিয়ানমার ও ভারত সীমান্তে পৌঁছাবে।
সড়কটি বরকল ও বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা হয়ে রামগড় উপজেলা সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে। পুরো রাস্তাটি সীমান্ত-সংলগ্ন পাহাড়ের ভেতর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে শুরু হওয়া ৩ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের ৩১৭ কিলোমিটারের কাজ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে পরবর্তী ৬৬৭ কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়ন হলে সীমান্তবর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলা সংযুক্ত হবে। ২০৩৬ সালের মধ্যে ১০৩৬ কিমি সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
পুরো কাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্ক। বিশেষ করে দীর্ঘ এই সীমান্ত সড়কটি অদূর ভবিষ্যতে ভারতের মিজোরাম-ত্রিপুরা এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পথকে প্রশস্ত করবে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উঁচু সড়কের স্বীকৃতি পাবে এ সীমান্ত সড়ক, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ ফুট উঁচুতে নির্মিত হবে। এর আগে ২০১৫ সালে বান্দরবানে নির্মিত থানচি-আলীকদম সড়কটি ছিল এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় ছিল সড়কটি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে উঁচু পাহাড়, গভীর খাদ, ভূমিধস, প্রকৃতির বৈরী আচরণ, আঞ্চলিক সংগঠনের অপতৎপরতা, পরিবহন ও যোগাযোগ সংকটসহ জটিল পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলা করে সড়কটির উন্নয়নকাজ পরিচালনা করে চলেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। পার্বত্য অঞ্চল দুর্গম হওয়ায় এ অঞ্চলকে একসময় পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে পারে এ সড়ক। কিন্তু এর জন্য বলি দিতে হচ্ছে অন্তত ১৬০টি আস্ত পাহাড়। যার জন্য হুমকির মুখে পড়তে পারে এ অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য। পরিবেশের এমন ক্ষতিসাধন করে এ উন্নয়ন কতটুকু যৌক্তিক, এমন প্রশ্ন বিশ্লেষকদের মাঝে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে পরিবেশগত বিপর্যয় এড়িয়ে অন্য কোন বিকল্প চিন্তা করা যেত কিনা, সে আলোচনাও তুলছেন কেউ কেউ।
পূর্বকোণ/ইব