চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

রাঙামাটিতে অবৈধ বসতি নির্মাণ চলছেই

পূর্বকোণ প্রতিনিধি

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১:৪৩ অপরাহ্ণ

২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জন নিহত হয়। রাঙামাটির সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ঝুঁকির মুখে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু স্থাপনা। পাহাড়ধসের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত অনুসন্ধান কমিটি স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি বেশকিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু গত ১০ বছরেও এ সুপারিশের বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি।

 

রাঙামাটি শহরের পাহাড়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ চলছেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ১২টি পাহাড়ে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক নতুন ঘর। এই পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভারী বৃষ্টি হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়।

 

নতুন করে বসতি : রাঙামাটি শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেনের ঘরটি ২০১৭ সালের ১৩ জুন সকালে ভয়াবহ পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত হয়। সেই স্থানে আবার নতুন ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন ইসমাইল। একই এলাকার মিনারা বেগমও নতুন করে ঘর তুলে বাস করছেন। সেবার পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত হয়েছিল তার ঘরটিও।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ধসের ঘটনার কয়েক মাস পর থেকেই নতুন করে ঘর নির্মাণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কয়েকশ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এ ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য পৌরসভার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। শিমুলতলী, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর ও ভেদভেদী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নতুন করে ঘর নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। যেসব মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ করে বসতি করছেন, তাদের বৈধ কাগজপত্র নেই। মূল শহরে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই, তাই ঝুঁকি জেনেও থাকতে হচ্ছে এখানে।

 

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পৌরসভায় বর্তমানে মোট ১৬ হাজার ৯৩৩টি হোল্ডিং (ঘর) রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ের অধীনে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। তবে হোল্ডিংয়ের সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। শহরের ১২টি পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এসব পাহাড়গুলো পড়েছে পৌর এলাকায়।

 

ঝুঁকিপূর্ণ ৩১ স্থান : ১২টি পাহাড়সহ শহরে ৩১টি স্থান জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। পাহাড়গুলো হলো নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, বিএডিসি কলোনি, পোস্ট অফিস কলোনি, উলুছড়া, আলুটিলা, কিনামনিঘোনা, মোনতলা, যুব উন্নয়ন এলাকা ও মোনঘর আবাসিক এলাকা। বৃষ্টির সময় জেলা প্রশাসন থেকে বারবার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কীভাবে উচ্ছেদ করা হবে তা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

 

সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি : রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর ‘ভ‚মিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক অনুসন্ধান কমিটি’ স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা রক্ষায় প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ, নতুন করে বসতি স্থাপন বন্ধ করা, পুনর্বাসন, পাহাড় কাটা বন্ধ করা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এ সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট