রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় পুরাতন হাসপাতালের এক কোটি নব্বই লক্ষ টাকার জমি দখল করে স্থায়ী আবাসন গড়ে তুলছে স্থানীয় একটি অসাধু চক্র। প্রতিনিয়ত জমি দখলের প্রবণতা বাড়তে থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি করেছে এলাকাবাসী। এতে সরকারি এই জমি বেহাত যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকার জনসাধারণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজস্থলী উপজেলার পশ্চিমে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ও পূর্বে রাজস্থলী থানার মাঝামাঝি রাজস্থলী হাসপাতালের নামে প্রায় এক একর নব্বই শতাংশ জমি হাসপাতালের নামে বন্দোবস্ত রয়েছে। দীর্ঘ ২০-২২ বছর পূর্বে হাসপাতাল অন্য জায়গায় স্থানান্তর হওয়ার পর থেকে জমিগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় সুযোগ সন্ধানী চক্র হাসপাতালের বন্দোবস্তকৃত এই জমিতে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং বাগান সৃজন করে দখল করে নিয়েছে। সীমানা জটিলতা থাকায় প্রশাসন হাসপাতালের নামীয় জমি পরিমাপের মাধ্যমে সীমানা খুঁটি স্থাপন করলেও তা তোয়াক্কা না করে অবৈধ দখলকারীরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করেই যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন আগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা নতুন নতুন গাছের চারা রোপণসহ নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইতোমধ্যে অবৈধ দখলকারীরা নিজেরাই জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তা আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। একটি সূত্র দাবি করেছে দখলকারীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সফিউল্ল্যাহ সিবলী জানান, পুরাতন হাসপাতালের নামে প্রায় এক একর নব্বই শতক জমি বন্দোবস্ত আছে। সেজায়গায় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধভাবে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ ও বাগান সৃজন করে বসবাস করে আসছে। তাদেরকে বার বার জমি হতে উঠে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়ার পরও তারা কর্ণপাত করছে না। বরং তারা আরো শক্তভাবে ঘর নির্মাণ করে দখল পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে। দখলকারীরা আমার ও মৌজার হেডম্যানের বিরুদ্ধে চিফ জুড়িশিয়াল আদালতে মামলা করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে জানানোর পর প্রশাসন সম্প্রতি সরেজমিনে বিস্তারিত দেখে গেছে।
দখলের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজীব কান্তি রুদ্র জানান, বিষয়টি আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছেন, আমি সরেজমিনে তদন্ত করে জানতে পারি হাসপাতালের নামে এক একর নব্বই শতক জমি নির্ধারণ করা আছে। প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, কিছু অসাধু কতিপয় হাজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানাজ আকতার লাকী প্রভাব কাটিয়ে জমিতে সেমিপাকা ঘর ও বাগান সৃজন করে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছেন। বিস্তারিত জেলা সিভিল সার্জন ও ইউএইচএফপিওর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় আইনের মাধ্যমে তাদের উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা হবে। দখলকারীরা জানান, আমরা হেডম্যানের কাছ হতে জায়গা কিনেছি। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।
অপরদিকে এ বিষয়ে ৩২৮ নম্বর পোয়াইতু মৌজার হেডম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা জানান, আমি কোন জায়গা কারো কাছে বিক্রি করিনি। হাসপাতালের জায়গা হাসপাতালের নামে অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং অবৈধ দখলকারীরা দীর্ঘ ২০-২২ বছর যাবত ঘর বানিয়ে জমি দখল করে আছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন এ প্রতিবেদককে জানান, পুরান হাসপাতালের নামে এক একর নব্বই শতাংশ জায়গা আছে বলে জানতে পারি। কিন্তু বহিরাগত কিছু লোক অবৈধ দখল করে আছে। আমি শীঘ্রই ইউএনও এবং স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ইতিমধ্যে দখলকারী হাসপাতালের পরিচালক ও হেডম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে।
এলাকবাসীর দাবি হাসপাতালের জমি থেকে অবৈধদখলকারীকে উচ্ছেদ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে সরকারি সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এলাকাবাসী বিষয়টি জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এবং জেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আরো গুরুত্বের সাথে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
পূর্বকোণ/ইব