ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই চেয়ারম্যানকে জামিন নামঞ্জুর করে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড চাইলে তাদের উপস্থিতিতে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তারা হলেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল করিম সাঈদী ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পেকুয়া যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
চকরিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন জানান, গত ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিকাল তিনটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকা সারাদেশের কর্মসূচি পালন করার জন্য চকরিয়া উপজেলা কাকারা ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন মিছিল বের করে। মিছিলে ছাত্রদল কর্মী মিজানুর রহমানও ছিলেন। ওইসময় আওয়ামী লীগের গুলিতে ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মিজানের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহ ১৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর জিআর ৪১৭, ১৮-১০-২৪ইং। এ মামলায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ১৪ নম্বর এজাহারনামীয় আসামী।
এদিকে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ফেনী থেকে র্যাবের হাতে আটক হন ফজলুল করিম সাঈদী। অপরদিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সন্দেভাজন হিসেবে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে পেকুয়ার শিক্ষক মো. আরিফ হত্যা মামলায় আসামী হিসেবে গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের একটি বাসা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। ওইসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন ৭দিনের রিমান্ড চান। এসময় আদালত ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, কাকারা ইউনিয়নের পুলেরছড়া এলাকায় মিছিলে গুলি করে ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমানকে হত্যার মামলায় এজাহারনামীয় আসামী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী ও অপর আসামী পেকুয়া যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
ফজলুল করিম সাঈদীর আইনজীবি এ্যাডভোকেট ফয়জুল কবির বলেন, ছাত্রদল নেতা মিজান হত্যা মামলায় দুই উপজেলা চেয়ারম্যানের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। আমরা রিমান্ডের বিরোধিতা করি। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মিজান হত্যার শিকার হয়। ওই সময় মিজান চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অভাবের সংসারে বাবাকে সহায়তা করতে রং মিস্ত্রির সহকারীর কাজ করতো। সহযোগী সংগঠনসহ বিএনপির একটি বিশাল মিছিল যাচ্ছিল। ওই মিছিল দেখতে গিয়ে বিএনপির উপর হামলাকারী ৪০ সদস্যের হেলমেট বাহিনীর গুলিতে মিজান নিহত হয়। এ ঘটনায় প্রথমে থানার এসআই কল্লোল চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। কিছুদিন পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদালতে একটি নালিশী মামলা করলে তদন্তের পর মামলাটি খারিজ করা হয়। সম্প্রতি আবারো নিহত মিজানের বাবা তৃতীয় মামলা দায়ের করেন। এদিকে দুই উপজেলা চেয়ারম্যানকে ওই মামলায় আসামী করায় আলোচনা সমালোচনা চলছে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ