গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র (রুই জাতীয়) হালদা নদীর উজান খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে অবাধে চলছে বিষাক্ত তামাকচাষ এবং ইজারা বহির্ভূত হালদা খালসহ পুকুর ও কৃষিজমি থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য; হালদার বুক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ধ্বংস হচ্ছে হালদার জীববৈচিত্র্য। এমন ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে বছরের পর বছর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি গত এক দশকে।
জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে মানিকছড়ি উপজেলার ঘোরখানা, ছদুরখীল, বড়বিল, তুলাবিল, আছাদতলী ও যোগ্যাছোলার বিস্তীর্ণ সমতল কৃষিভ‚মিতে দেড়শোর অধিক প্রান্তিক কৃষক কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ করে আসছিলেন। টানা দীর্ঘ কয়েক বছর হালদা নদীর উজানের দু’পাড়ে তামাকচাষের ফলে নষ্ট হচ্ছিল হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও জীববৈচিত্র্য এবং হুমকির মুখে পড়ে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য। তামাকচুল্লিতে লাকড়ির জোগান দিতে ধ্বংস করা হচ্ছিল বনের গাছ।
এমন পরিস্থিতিতে হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও তামাকচাষিদের বিকল্প জীবিকা সৃষ্টিতে ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ ও পিকেএসএফ। উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপে হালদার উজানে কমে এসেছে তামাকচাষ। ১৫০ জন থেকে কমে বর্তমানে নিবন্ধিত তামাকচাষি রয়েছেন মাত্র নয়জন। ফলে হালদার চরে এখন চাষ হচ্ছে বিভিন্ন শাকসবজি। এতে জীববৈচিত্র্যে ফিরে এসেছে সজীবতা। কৃষিজীবীরা পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর চাষাবাদের উপায়।
তামাকচাষি মো. কামাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম জানান, তামাক চাষ করলে নিজের এবং পরিবারের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়। তাছাড়া জমিতে অধিক পরিমাণ সার ব্যবহারের ফলে অন্যান্য ফসলও কম হয়। তাই তামাকচাষ ছেড়ে ধান ও অন্যান্য মৌসুমি সবজি চাষ করছি।
পূর্বকোণ/ইব