চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁত

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগড়

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আধুনিকতার স্রোত আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাহাড়ের অনেক সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের মতো দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁত শিল্প। অবশ্য এ ঐতিহ্যের ক্রম লুপ্ত হওয়ার পিছনে এই শিল্পে ব্যবহৃত বনজ সরঞ্জাম ও কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতাকেও দায়ী করা হয়।

 

শীতের সকালে বাড়ির উঠানে সোনালী রোদে কোমরতাঁতে পরিবারের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় বুনতেন নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা। একসময় প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি বাড়ির উঠানে কাপড় বোনার এ দৃশ্য দেখা যেতো। কাপড় বুনতে বুনতে চলতো পড়শি কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা। দুর্গম পল্লীর কোন কোন বাড়িতে চোখে পড়লেও শহুরে বসতিতে এখন এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া বিরল।

 

জুমে উৎপাদিত কার্পাস তুলায় চরকায় তৈরি করা সুতা বুনো গাছ-গাছালির কস বা রস ব্যবহার করে বিভিন্ন রঙে রঙিন করা হতো। আর বিশেষজাতের বনজগাছের কাঠ ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে রঙিন সুতায় বোনা হয় কোমরতাঁতে নানা কাপড়-চোপড়। কোমরে বেঁধে কাঠ ও বাঁশের সরঞ্জামে কাপড় বোনা হয় বলে এর নাম কোমরতাঁত।

 

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সকল সম্প্রদায়ই কোমরতাঁতে পরিবারের বস্ত্রসামগ্রী তৈরি করতো। অবশ্য প্রত্যেক সম্প্রদায়ের তৈরি বস্ত্রসামগ্রীর আলাদা নকশা, রঙ ও নাম রয়েছে। কোমরতাঁতে কাপড় বোনার ঐহিত্য শত শত বছরের পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই পাহাড়ি নারীরা নিজেদের পরনের কাপড় নিজেরাই বুনতেন। কোমরতাঁতেই বোনা হতো এসব কাপড়। একটা সময় কোমরতাঁতে কাপড় বোনার সক্ষমতাই ছিল বিয়ের ক্ষেত্রে কনের মূল যোগ্যতা। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেশিভাগই জুমচাষে নির্ভরশীল। নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন। অবসরে কোমরতাঁতে কাপড় বোনেন। তবে সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। দুর্গম পল্লী-গ্রামের নারীদের হাত ধরেই এখনও যা একটু টিকে আছে এই শিল্প।

 

কোমরতাঁতে কাপড় বোনা কারিগররা জানান, বন উজাড়ের কারণে আগের মতো জঙ্গলে সরঞ্জাম তৈরির বিশেষজাতের কাঠ ও বাঁশ পাওয়া যায় না। জুমচাষও কমে গেছে। কার্পাস তুলা বা সুতা রঙ করার সেই গাছ-গাছালিও নেই। এছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে তুলা থেকে সুতা তৈরিও সময়সাপেক্ষ। তাই কোমরতাঁতের প্রযুক্তি সরঞ্জাম, কাঁচামাল সবকিছুই বাজার থেকে কিনতে হয়। আর বাজারে সুতাসহ প্রায় সবধরনের উপকরণের দামই বেড়েছে। তাই এখন আর কাপড় তৈরি করে পোষায় না।

 

 

প্রতিভা ত্রিপুরা নামে একজন সৌখিন কোমরতাঁতি বলেন, বর্তমান বাজারে পাহাড়ি নারীর হাতে তৈরি একটি শীতের কম্বল বিক্রি করা যায় ৪০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। এমন একটি কম্বল তৈরিতে উল কিনতে হয় প্রায় সাড়ে ৩০০-৪০০ টাকার। এছাড়া উল কিনে মার দেয়া, টানা দেয়া, শুকানো এবং বুননে যে সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়, তাতে পারিশ্রমিক উঠে আসে না।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট