খাগড়াছড়ি জেলার নয় উপজেলায় চলছে পাহাড় কাটা। পাশাপাশি জেলার নদী-খাল,ছড়া-ঝিরি অবৈধ দখলের কবলে পড়ে তার নিজস্ব গতিপথ হারাচ্ছে। গেল বছর এখানে চার দফা বন্যা হয়েছে। ডুবেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট। ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। এসবের মূল কারণ হিসেবে রয়েছে পাহাড় কাটা, নদী দখল ও ময়লা আবর্জনা ফেলে নদী, খাল ছড়াগুলোর তলদেশ ভরাট হওয়া।
খাগড়াছড়ি জেলার চেঙ্গী, দীঘিনালার মাইনি নদী, রামগড়ের ফেনী নদীসহ জেলার ছোটো-খাটো খাল-ছড়া রয়েছে তার নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। নদী এবং খাল দখল করে অবৈধভাবে বাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি প্রবাহ। একইভাবে পাহাড়ের পলিমাটি নদী, খালগুলোতে জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এখানে বন্যার সৃষ্টি হয়।
খাগড়াছড়ি শহরের খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এসব যেন কেউ দেখার নেই। সাতভাইয়াপাড়া এলাকা থেকে শুরু হয়ে এ খালটি হাসপাতাল এলাকা মিলনপুর হয়ে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানে মিশেছে। খালে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতবাড়ি, দোকান এবং মার্কেট। ফলে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সড়কগুলো ডুবে যায়। পানছড়ি উপজেলার পাশ দিয়ে ঘেঁষে যাওয়া খাল ও নদীতে ব্যাপকহারে ময়লা আবর্জনা ফেলায় এখানকার পানি দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ জানান, আমরা পাহাড় কাটার ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে রয়েছি। খবর পেলেই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করছি। এ অভিযান চলমান। দীঘিনালা, মাটিরাঙা, পানছড়ি, মহালড়ি, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্ণীছড়িসহ সদরের প্রত্যেকটি উপজেলায় চলছে পাহাড় কাটা। প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে।
পাহাড় কাটার দায়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও জেল দিয়েছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। বারবার বন্যার জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কর্তনকে দায়ী করেছে পরিবেশবিদরা। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় জানান, নদী খাল-ছড়া অবৈধভাবে দখলকারীদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন করেছি। এসব দখলদারদের উচ্ছেদ করতে আমরা শীঘ্রই অভিযানে নামবো।
বেআইনিভাবে পাহাড় কাটার ফলে আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা শঙ্কায় থাকেন সবসময়। স্থানীয়দের অভিযোগ আইনের তোয়াক্কা না করে শুষ্ক মৌসুম আসলেই পাহাড় কর্তন শুরু হয়। সরকারের যে আইন রয়েছে তা মানা হচ্ছে না । পাহাড় কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে। বর্ষাকালে এসব পাহাড় ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ জানান, ইতোমধ্যে পাহাড় কর্তনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে প্রশাসন। ভবিষ্যতেও এমন অভিযান চলমান থাকবে। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হওয়া বলে জানান এ কর্মকর্তা। পাহাড় কর্তনের দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। যারা পাহাড় কাটবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল জানান, আধুনিক এ যুগে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড় না কেটে উন্নয়ন করা যায়। পাহাড় কাটার কারণে বারববার বন্যা হচ্ছে। পাহাড় কাটায় নদী ,খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে।
পূর্বকোণ/ইব