চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

রামুতে বলীখেলার নামে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর

রামু সংবাদদাতা

৩ জুন, ২০২৩ | ১১:৪১ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুতে বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার নামে চলছে জমজমাট জুয়ার আসর। উপজেলার বিভিন্নস্থানে ২/৩ দিনব্যাপী আসর বসিয়ে চলছে জুয়াসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

 

দীর্ঘদিন রামুতে এমন জুয়ার আসর আর দেখা যায়নি। আকষ্মিকভাবে এসব জুয়ার আসর দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তবে এসব আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে আসর পরিচালনা করছেন।

 

আজ শনিবার (৩ জুন) বিকালে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নন্দাখালী মুরাপাড়া এলাকায় ৩ দিনব্যাপী বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার শেষ দিনে বলীখেলার কোন আয়োজন চোখে পড়েনি। দেখা মেলেনি কোন বলীরও। তবে সেখানে ১০/১২টি স্টলে চলছিল জমজমাট জুয়ার আসর। এসব আসরে জুয়া খেলায় মেতেছে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ।

 

জানা গেছে, নন্দাখালী গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে গত ১ জুন থেকে নির্বিঘ্নে চলছে এ জুয়ার আসর। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফার কাছ থেকে বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার নামে অনুমতি নিয়ে এ জুয়ার আসর চালিয়ে আসছেন ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ও তার একাধিক সহযোগী।

 

উল্লেখ্য, ২১, ২২ ও ২৩ মে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মইশকুম পাড়ায় রেললাইন সংলগ্ন মাঠে বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার নামে জুয়ার আসর বসিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কবির বলী। এ নিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করার জেরে এক সংবাদকর্মীকে হুমকি দিয়েছেন কবির বলী। কবির বলী ওই সংবাদ কর্মীকে বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তিনি বলিখেলা পরিচালনা করেছিলেন। রামু থানার পুলিশ অফিসারকে তিনি সম্মানিত করেছেন। কক্সবাজার-রামুর অনেক সাংবাদিক এসেছিলেন। তাদেরও সম্মানিত করেছেন। এরপরও বলীখেলা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে খবর আছে।

 

এদিকে আগামীকাল রবিবার (৪ জুন) রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব ধেছুয়াপালং এলাকায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে একটি জুয়াডি চক্র বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যানার ছাপিয়ে প্রচারণাও শুরু হয়েছে।

 

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার ইউএনও এবং ওসির নেই।

 

তিনি আরও জানান, রামু থানায় যোগদানের দুই বছরে কোথাও বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কিংবা জুয়ার আসর দেখেননি। হঠাৎ কিভাবে এসব শুরু হল বলতে পারছেন না। তবে পূর্বকোণের এক প্রশ্নের জবাবে, চলমান এসব জুয়ার আসর বন্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেবেন কিনা তা জানাননি ওসি।

 

রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বলেন, বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার নামে জুয়া খেলার আসর সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে এখন থেকে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চললে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এদিকে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মইশকুম পাড়া ও নন্দাখালী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক নীরবতায় এখানে কয়েকদিন পর পর বলীখেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর চলছে। জুয়ার আসরকে ঘিরে এসব এলাকায় এখন অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও উঠতি যুব সমাজ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করছে। অভিভাবক ও সচেতন মহল এ নিয়ে জোর প্রতিবাদ জানালেও জুয়ার আসর বন্ধে কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট