চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকনাফে চালের কার্ড দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

টেকনাফ সংবাদদাতা

৩০ মে, ২০২৩ | ১০:৫৬ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের টেকনাফে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে নাম দেওয়ার কথা বলে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাফর আলম প্রকাশ এসকে জাফর নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

 

শুধু তাই নয়, জন্মসনদ করে দেবে বলেও জাহেদা নামের এক মহিলার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

 

অভিযুক্ত জাফর টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের আলী আকবর পাড়ার বাসিন্দা মৃত হাজি বদিউজ্জামানের ছেলে ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎসজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে রয়েছেন।

 

এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতানোর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য বশির আহমদ ও অভিযুক্ত জাফর দু’জনই স্বীকার করেছেন। জাফর আলম বিভিন্ন সময় সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে সরকারি অনুদানের কার্ড করে দেবেন বলে টাকা হাতিয়ে নেন।

 

জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় অসচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীরা দুই বছর মেয়াদে (২০২৩-২৪) বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। শুধু খাদ্য সহায়তাই নয়, উপকারভোগী প্রত্যেকের নিজস্ব একটি ব্যাংক হিসাবও খুলে দিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। চাল নেয়ার সময় এই অ্যাকাউন্টে ২২০ টাকা জমা করছেন উপকারভোগীরা। যা হবে তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক মূলধন গঠন।

 

স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানান, তাদেরকে উপজেলার মৎস্য অফিস থেকে জেলে ভাতার তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং পরবর্তীতে জেলে কার্ড হাতে পেলে সরকারিভাবে জেলে ভাতা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক জেলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন জাফর । মূলত মৎস্য সমিতির নেতার পরিচয়ে তিনি এসব প্রতারণা করছেন বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ। রোকেয়া বেগম, নার্গিস আক্তার, মিনারা আক্তার, ফাতেমা আক্তার, সাহারা ও মমতাজ মিয়াসহ অনেকের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

 

ভুক্তভোগী মমতাজ মিয়া বলেন, চালের কার্ড দিবে বলে প্রতারণা করে তার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে জাফর। যখন চালের কার্ড দেবে তখন আরও ১ হাজার করে দিতে বলেছেন।

 

নাজমা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, কর্মসূচিতে চারজনের নাম উঠানোর কথা বলে আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা দেওয়ার পর প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এসকে জাফর আমাদেরকে ভিডব্লিউবি’র কার্ড করে দিতে পারেননি। এছাড়া জন্মনিবন্ধন সনদ করে দেবেন বলে আরও ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 

জাহেদা নামে আরেকজন মহিলা বলেন, আমার কাছ থেকে দুইটি ভিডব্লিউবি’র বিনামূল্যে ৩০ কেজি চালের কার্ড করার অজুহাতে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবশেষে চালের কার্ড না পেয়ে আমরা হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীর নিটক অভিযোগ করেছি।

 

অভিযুক্ত জাফর আলমের কাছে অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে অন্যজনকে দিয়েছে বলে জানান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দেবেন বলেও জানান।

 

হ্নীলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বশির আহমদ বলেন, আমি জাফরকে জিজ্ঞেস করেছি। টাকা নেওয়ার কথা সে আমার কাছে স্বীকার করেছে। সে নাকি টাকাগুলো অন্য আরেকজনকে নিয়ে দিয়েছে।

 

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ভুক্তভোগীরা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি’।

 

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জান বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট