চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জাহাজভাঙা শিল্পের অস্তিত্বে শেষ পেরেক, ‘লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তি’

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

২৯ মে, ২০২৩ | ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

চরম দুঃসময়ের মধ্যেই জাহাজ ভাঙা শিল্পকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। এতে স্ক্র্যাপ জাহাজের পরিবেশ ছাড়পত্রসহ কাটিংয়ের অনুমতি পেতে ২-৩ মাস পর্যন্ত বাড়তি সময় লেগে যাচ্ছে। কিন্তু এলসির বিপরীতে প্রতিদিন ৫-১২ লাখ টাকা লোন শোধ করতে হচ্ছে মালিকদের। ফলে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এ শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক বলে অভিহিত করেছেন মালিকরা। সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্প থেকে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেত সরকার। কর্মসংস্থান হয়েছিলো লক্ষাধিক মানুষের। প্রতিবছর ২৫ লাখ টনেরও বেশি লৌহা পেয়ে সচল ছিলো দেশের নির্মাণ শিল্প। কিন্তুদেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও সরকারি নানা বিধি-নিষেধ, দুর্ঘটনায় মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানিসহ নানা কারণে শিল্পটির অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এরমধ্যে করোনার থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শিপইয়ার্ড ৬০টি থেকে বর্তমানে ৩৫টিতে নেমে আসে। বিপর্যস্ত মালিকরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন ঠিক তেমনি সময়ে গত মার্চ মাসে কমলো শ্রেণিভুক্ত শিল্প থেকে এ শিল্পটিকে লাল তালিকা ভুক্ত করা হয়।

 

বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স এন্ড রি-সাইক্লার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লাল তালিকা ভুক্ত করে জটিলতা সৃষ্টি করার কারণে আমাদের ৪২টি জাহাজ দেড় মাস ধরে আটকে পড়ে আছে। আগে জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশ অধিদপ্তরের কমলা শ্রেণিভুক্ত ছিল। নতুন আইনে এটিকে লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়। ঢাকা থেকে অনুমোদন আনতে দেড় থেকে দুই মাস লেগে যাচ্ছে।

 

এসএন গ্রিন কর্পোরেশন শিপইয়ার্ডের মালিক শিল্পপতি শওকত আলী চৌধুরী বলেন, এলসি ও ডলার সমস্যার কারণে ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক ইয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশ ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যেও বিপুল অংকের টাকা খরচ করে ইয়ার্ড মালিকরা আন্তর্জাতিক মানের গ্রিন ইয়ার্ড করছে। গত ৫ বছরে পাঁচটি গ্রিন শিপইয়ার্ড হয়েছে। আরও ৭/৮টি গ্রিন শিপইয়ার্ড হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে লাল তালিকার জটিলতায় জাহাজ কাটিং বন্ধ হয়ে আছে। সুদ কিন্তু থেমে নেই। এত লোকসান দিলে ইয়ার্ডগুলো বন্ধই হয়ে যাবে।

 

বিএসবিআরএ’র সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম সবসময় ওঠানামা করে। যার কারণে এলসি খুলে ব্যবসায়ীরা এভাবে অপেক্ষা করতে পারেন না। বিভিন্ন ছাড়পত্র যাতে দ্রুততার সঙ্গে দেয়া ও এ শিল্পকে আবারো কমলা শ্রেণিতে ফিরিয়ে নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’

 

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ আইনে লাল তালিকায় অবস্থান করা মানে শিল্পটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এতে অনেক বিষয়ের ছাড়পত্র ঢাকা থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট