চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আদিলের শখের বাগানবাড়ির গল্প

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

২৮ মে, ২০২৩ | ৭:২৭ অপরাহ্ণ

সম্রাট শাহজাহান তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতি ধরে চিরজাগরুক রাখতে তৈরি করেছিলেন ভারতের আগ্রায় ‘তাজমহল’। স্ত্রীর মৃত্যুতে প্রচন্ডভাবে শোকাহত হয়ে তিনি এ অসাধারণ সৌন্দর্যময় স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। 

সম্রাট শাহজাহানের মতো চন্দনাইশে ফতেনগরে প্রতিথযশা আইনজীবী প্রয়াত বদিউল আলমের ছেলে আফ্রিকা মহাদেশের কংগো প্রজাতন্ত্রের আনারারি কনসাল্ট, সালমা আদিল ফাউন্ডেশনের পরিচালক, মানবাধিকার কর্মী জিয়া উদ্দীন আদিল তাঁর পিতা প্রতিথযশা আইনজীবী প্রয়াত বদিউল আলমের স্মৃতি ধরে রাখতে তৈরি করেছেন তাদের গ্রামের বাড়ি ফতেনগরে অপরূপ এক বাগান বাড়ি।

যেখানে রয়েছে একটি দ্বিতল ছোট বাড়ি, পিছনে পুকুর, পুকুর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ঘাট, তার সাথে সিলেটের পাথর বসিয়ে ঝর্ণা সৃষ্টি করা হয়েছে। যা দেখলে সবার নজর কাড়ে।  আদিল তাঁর পিতার স্মৃতি ধরে রাখতে অপরূপ এ বাগান বাড়ি তৈরি করেছেন। যা এখন চন্দনাইশ নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে দেখার মত অন্যতম আকর্ষণীয় বাগান বাড়িতে পরিণত হয়েছে। স্থাপনাটির তিন পাশে খাল খনন করে বর্ষা মৌসুমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ বাগান বাড়িটির পাশের পটিয়া উপজেলার সীমানা ঘেঁষে খাল খনন করেছেন তিনি। প্রতিদিন সেখানে মানুষ প্রবেশ করতে না পারলেও বাগান বাড়ির পাশাপাশি ১২ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সিকদার বাড়ি জামে মসজিদটি এক নজর দেখতে ভিড় জমান বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির বিনোদন প্রেমী মানুষজন।

চন্দনাইশের উত্তরে তথা পটিয়া উপজেলার সীমানায় ১৪ একর (৩৫ কানি) জায়গার উপর দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ভবন, তিনটি পুকুর,  ফুল বাগান, ঘরের পাশে সিলেট থেকে আনা পাথর বসিয়ে ঝর্ণার সৃষ্টি যে কারো নজর কাড়ে। এ বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ফুল ও ফলের বাগান, পুকুরগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ, খালি জমিতে ধানের চাষ, উচু জায়গাগুলোতে সবজি চাষ, গরুর ফার্ম করে দুধ সংগ্রহ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। নান্দনিক এসব স্থাপত্য দেখতে আসেন বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের স্বজনেরা। সেখানে বসার স্থান যেমন রাখা হয়েছে, তেমনি আছে প্রার্থনার জায়গাও। একজন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনের খোরাক জোগানোর সব আয়োজনই রাখা হয়েছে সেখানে। এ বিশাল বাগান বাড়িটি পরিচর্যা, উৎপাদিত ফলফলাদি সংরক্ষণ, সংগ্রহ করতে নিয়মিত ১০ জনের অধিক কর্মচারী রয়েছে।

এখানে উৎপাদিত ফলফলাদি ও শাকসবজি ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় এলাকায় চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে জিয়া উদ্দীন আদিল তার উৎপাদিত শাক সবজি ও পুকুরের মাছ রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ান করে থাকেন বছরে কয়েকবার। তার স্বজনদের পাশাপাশি এ বাগান বাড়িতে তার পিতা এডভোকেট বদিউল আলমের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতি বছর অর্ধ-শতাধিক আইনজীবী এসে থাকেন। বাগান বাড়িতে যারা আসেন তারা কোন না কোনভাবেই বাগান বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে নিজের ছবিটি তুলে রাখেন নিজেদের মোবাইলে। বাগান বাড়িতে তারা কেউ বসবাস না করার কারণে নির্জন জায়গাটিতে নেই কোন কোলাহল। তবে মাঝে মাঝে পাশ থেকে ভেসে আসে কিচির-মিচির পাখির আওয়াজ।

হালকা মনোমুগ্ধকর বাতাস যে কারোরই মনে দোলা দিয়ে যাবে। পুকুরে ফুটে থাকা শাপলার দৃশ্য যেমন মনকে নাড়া দেবে তেমনি গাছগাছালির সমারোহে মিলবে প্রশান্তি। বিকেলে বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাগান বাড়ির আশেপাশে। তখন পাক-পাখালির খোলাহল যেন দেখা ও উপভোগ করার মত।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট