আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন মিশন (নৌকা), মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর সন্দ্বীপ উপজেলার প্রধান ও সাবেক পৌর প্রশাসক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (আনারস), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম মাহমুদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বেলাল (দোয়াত কলম)। এদের মধ্যে আনারস প্রতীককে সমর্থন দিয়ে মশাল ও দোয়াত কলম তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ গঠিত। উপজেলার মোট ৮৬টি কেন্দ্রের ৫৭২টি বুথে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৩৫ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জন মহিলাসহ মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১০ জন ভোটার ভোট প্রদান করবেন।
নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই প্রার্থীর মধ্যে জমজমাট প্রচার প্রচারণা ছিল লক্ষণীয়। তবে অভিযোগও কম ছিল না।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নির্বাচনের শুরু থেকেই তার প্রস্তাবকারী হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে হামলা, প্রচারণা মাইকে বাধাদান ও তার ব্যবহৃত গাড়ি আটক এবং চারজন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ থানায় লিখিত অভিযোগের কথা জানান।
পরদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি আরো বলেন, আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির মতো নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রচারণার এক পথ সভায় উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলমগীর মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমিরকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগে দুটি গ্রুপের বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় সাংসদের বিরুদ্ধে নেওয়া জোট ও আওয়ামী লীগের অন্য অংশ কাজ করছেন আনারসের পক্ষে। স্থানীয়দের মুখে গুঞ্জন রয়েছে, এটি নৌকা আনারসের প্রতিযোগিতা হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্থানীয় সাংসদ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের সাথে।
এরমধ্যে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে আনারসের নির্বাচন করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজিবুল আহসান সুমনকে অব্যাহতি প্রদান করেছে। একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আকবর এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোশাররফ হোসেন লিটন এবং সদস্য মিজানুর রহমানকে কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্তোষপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান ফুলমিয়া, আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও আমানউল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাবেক পদধারী বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন আনারসের পক্ষে।
অব্যাহতি প্রাপ্ত উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, আমি তো কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। তাহলে আমাকে অব্যাহতি দিবে কিভাবে?
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ডসহ বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও আটজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে।
পূর্বকোণ/এ