চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন : ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন  

১৯ এপ্রিল, ২০২৩ | ১:৩৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি ভোটে না থাকা ও গাটছাড়া প্রচারণার কারণে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বলেছেন, সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে।

আগামী ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। মোমবাতি প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা স উ ম আবদুস সামাদ। চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ফরিদ উদ্দিন। আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মো. কামাল পাশা ও একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মো. রমজান আলী। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিএনপি নেতা আবু       সুফিয়ান। নির্বাচনে জিতেছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদ। এবারের উপনির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি।

এ বিষয়ে গতবারের বিএনপিদলীয় প্রার্থী আবু  সুফিয়ান বলেন, ‘প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের কোন আস্থা-বিশ^াস নেই। আমাদেরও নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন দেখলেই তা পরিলক্ষিত হয়। ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটারের জন্য হাঁ হাঁ করেছে। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। তারপরও ইভিএমের ব্যালট প্যানেল বাইরে নিয়ে গেছে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন। এই তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাই ভালো।

নির্বাচনী এলাকায় পাঁচ প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার দেখা গেলেও মাঠে সরব রয়েছেন তিন প্রার্থী। ভোটের সময় ঘনিয়ে আসতেই প্রার্থীদের প্রচারণাও বাড়ছে। বাড়ছে পোস্টার-ব্যানারও।

নগরী ও বোয়ালখালী ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ বোয়ালখালীতে একাধিক বড় আকারের ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতারা এসব ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে থাকছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। একইভাবে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থীও। চট্টগ্রাম-৮ আসনে ইসলামী ফ্রন্টের ভালো সমর্থক রয়েছে। ২০১০ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জিতেছিলেন ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী। এছাড়াও চরণদ্বীপ ইউপি নির্বাচনেও ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী জিতেছিলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করে জয় পেয়েছিলেন ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থীরা। এবারও কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী। তবে নেতাকর্মীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন তিনি।

ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আল্লামা স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদেরকে হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। বোয়ালখালী পৌরসভায় প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্থা ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়াও ভোটের গোপন কক্ষে অবাঞ্চিত লোক ও ভূতের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা এসএম ফরিদ উদ্দিনও। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা কোনো ধরনের ভয়-ভীতি বা বাধা-বিপত্তি পাইনি। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা চলছে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদেরও উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু ভোটের দিনের পরিবেশ ভোটারের অনুকূলে থাকবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করছেন ভোটাররা। কমিশনকে ভোটারদের হতাশা দূর করতে হবে। ভোটের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভোট কক্ষে অবাঞ্চিত লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এবারও ভোট দিতে পারবে না কীনা সন্দেহ-শঙ্কায় রয়েছেন ভোটাররা। তবে আমরা আশা করবো, ভালো নির্বাচন হবে।

তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ সুন্দর ও ভালো থাকবে। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।’

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শঙ্কা আর ভয়-ভীতি দেখানো অভিযোগের বিষয়ে নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘এটা গৎবাধা অভিযোগ। ভোটে বিএনপি নেই। শক্ত প্রতিযোগিতাও তেমন একটা নেই। এখানে ভয়-ভীতি দেখানোর প্রশ্নই নেই।’

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি। বিএনপির ভোটে না থাকা ও রমজানের কারণে প্রচারে গাÑছাড়াভাব দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ইফতার মাহফিল, পোস্টার-ব্যানার ও ট্রাক-গণসংযোগে চলছে প্রচারণা। প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৭ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট