চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বদলে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বদলে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনপ্রিয় এই সমুদ্র সৈকতকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে এটির উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নকশা অনুযায়ী এই সাগর পাড়ে নির্মাণ করা হবে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে, দৃষ্টিনন্দন সেতু এবং একটি উন্নতমানের রিসোর্ট, একটি রেস্তোরাঁ যা বাস্তবায়নে অতিদ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির লীলাভূমিখ্যাত সীতাকু-ের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সাগর উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ঘিরে বিগত প্রায় এক দশক ধরে পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমান ইউটিউব-গুগুলের যুগে এই সমুদ্র সৈকতের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দ্রুত প্রচারিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারাবছর এখানে ছুটে আসছেন লাখো দর্শনার্থী। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এই সৈকত ছিলো সম্পূর্ণ প্রকৃতিগত। এটি নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা ছিলো না। কিন্তু গতবছর সরকার এই সমুদ্র সৈকতকে স্বীকৃতি দিয়ে পর্যটন স্পট ঘোষণা করে। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সীতাকু-কে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় গুলিয়াখালী বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটিও। সেই থেকে ধীরে ধীরে উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে থাকে এই পর্যটন স্পটটি। সবশেষে এটিকে ঢেলে সাজানোর দিকে নজর দেয়া হয়েছে। গুলিয়াখালী বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, এটি পর্যটন ঘোষণার আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে এর অবস্থা খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউসসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি এখানে আসেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দীন স্যার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান স্যারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এই সৈকতের উন্নয়নের জন্য বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে আমাদের দায়িত্ব দেবার পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই সৈকতকে আরো আকর্ষণীয় করতে আমরা গত বছর থেকেই কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ শুরু করি। একটি নকশাও প্রস্তুত করেছি। সৈকতের নকশাটি তৈরি করে পাঠানোর পর গত বুধবার এটি অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। এতে রয়েছে বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতে যাবার জন্য একটি সুবিশাল ওয়াই আকৃতির ওয়াকওয়ে। এটি ওয়াই আকৃতির হয়ে সাগর পাড়ে দুই দিকে চলে যাবে। দুই প্রান্তের একদিক চলে যাবে রিসোর্টে আর অন্যদিক রেস্তোরাঁর সাথে গিয়ে মিলিত হবে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য একটি জেটি করার পরিকল্পনা আছে, এর মধ্যেই দ্রুত ওয়াশরুম নির্মাণ, সৈকতে গড়ে উঠা অপরিকল্পিত দোকানগুলোকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে নিয়ে আসা, নিয়মিত সৈকত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি পদক্ষেপ শুরু হবে। সব মিলিয়ে এটি পরিকল্পিত ও মনোরম একটি পর্যটন স্পট করতে কাজ করব আমরা। তবে নকশা অনুমোদন হলেও বড় বড় উন্নয়ন কাজগুলো শুরু হবে বরাদ্দ সাপেক্ষে। আর ছোট ধরনের কাজগুলো স্থানীয় আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী চলবে।

 

এদিকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের দারুণ প্রশংসা করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি এ এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। গুলিয়াখালী সৈকত প্রকৃতির সঙ্গে সমুদ্রের একটি অসাধারণ মেলবন্ধন। আমি পরিদর্শন করে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি। ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য্যের কারণে পর্যটকদের সহজে কাছে টানছে সৈকতটি। এখানে পর্যটনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা আমি খতিয়ে দেখেছি। সে অনুযায়ী যে নকশাটি পাঠানো হয়েছিলো তা অনুমোদনও দিয়েছি আমরা।

 

জেলা প্রশাসক বলেন, এ সৈকতকে ঘিরে উন্নয়নে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। সৈকতটিকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এরমধ্যে রিসোর্ট তৈরি ও বেড়িবাঁধ থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য ভূমি থেকে ১০ ফুট একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। বর্ষাকালে সাগর পাড় পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই ওয়াকওয়েটি দারুণ কাজে আসবে এবং আরো সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে। এটি হবে কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন। সৈকতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশের ইউনিট চালু করার কার্যক্রম চলছে। সবার আগে সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেজন্য সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বিএনসিসির সমন্বয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি দোকানগুলো সরিয়ে আনতে হবে। পর্যাপ্ত টয়লেট স্থাপন করতে হবে। এ কাজগুলো দ্রুত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে তিনি বলেছেন বলে জানান।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট