চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জামিজুরীর বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা প্রশাসনের

চন্দনাইশ সংবাদদাতা

২৫ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩০ অপরাহ্ণ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন চন্দনাইশের দোহাজারী জামিজুরীতে ১৫ জনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্যাতন করে হত্যা করে একই গর্তে পুতে পেলে। সে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আজ শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে বধ্যভূমি বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা প্রশাসন।

 

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগমের সাথে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলী হিরু, চন্দনাইশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এড. মো. দেলোয়ার হোসেন, কৃষকলীগ নেতা নবাব আলী, সাংবাদিক সৈকত দাশ ইমন, শহিদুল ইসলাম, মো. আয়ুব মিয়াজীসহ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

 

উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের এ দিনে নারী ও শিশু, তরুণ-যুবকদের প্রতি যে বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার ইতিহাস জাতি ভুলে নাই। সে নির্যাতনের শিকার হন দোহাজারী জামিজুরীর কয়েকটি হিন্দু পরিবার। সেখানে ১৫ জনের অধিক লোককে দিন দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে কোন রকম ধর্মীয় রীতিনীতি না মেনে একই গর্তে সবাইকে পুঁতে ফেলা হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে একসাথে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হতো বা গণ-কবর দেয়া হতো। সে সকল গণ-কবরই আজকের বধ্যভূমি।

 

উপজেলার দোহাজারী জামিজুরী বধ্যভূমি পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নৃশংসতার সাক্ষী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন। এরপর পাক হানাদার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনে। বাঙালি নিধনের অংশ হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত এলাকাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় হানাদার বাহিনী মানব হত্যার নির্মমতায় মেতে উঠে ছিল সেদিন চন্দনাইশ (তৎকালীন পটিয়া থানার) দোহাজারী জামিজুরী গ্রামে।

 

১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী দোহাজারীর জামিজুরী গ্রামে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে একজন নারীসহ ১৫ জনের অধিক নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করে। তৎমধ্যে আছেন- জামিজুরী গ্রামের শহীদ ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য, মাস্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য, মাস্টার মিলন ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, রেনু বালা ভট্টাচার্য, ডা. করুনা কুমার চৌধুরী, হরি রঞ্জন মজুমদার, মহেন্দ্র সেন, নগেন্দ্র ধুপী, রমনী দাশ, অমর চৌধুরী ও মনীন্দ্র দাশ। স্থানীয় এলাকাবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো একত্রিত করে একটি গর্তে সমাধিস্থ করেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সুভাস মজুমদার (উত্তর আমিরাবাদ) ও মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (নলুয়া) ও মনীন্দ্র দাশ (মুজাফরাবাদ) অনেক নাম না জানা বক্তির দেহাবশেষও এখানে সমাধিস্থ করা হয়।

 

স্বাধীনতার পর স্থানীয় ক’জন প্রগতিশীল তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি। দীর্ঘদিন অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ রহিম জামিজুরী বধ্যভূমির ফলক উম্মোচন করেন। পরবর্তীতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি স্থলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেয়া হয়।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট