চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে সুদিন এসেছে সীতাকুণ্ডের দুই শতাধিক পুদিনা চাষির

সৌমিত্র চক্রবর্তী

২৫ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রমজানে সুদিন ফিরেছে সীতাকুণ্ডের দুই শতাধিক পুদিনা চাষির। এখন প্রতিদিন চাষির জমি থেকে বিপুল পুদিনা পাতা চলে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এতে একদিকে উপজেলার কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে পুদিনা ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন এলাকার আরো বহু দরিদ্র নর-নারী।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে মোট ২১০ জন চাষি পুদিনা পাতার চাষ করেন। বিশেষ করে রমজানকে সামনে রেখে তারা পুদিনা বপন করেন। যাতে রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুদিনা সরবরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। আর প্রতিবছর কৃষকদের এই পুদিনা চাষে সরাসরি সম্পৃক্ত হন উপজেলা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা। চাষিরা তাদের পরামর্শ দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের পুদিনা উৎপাদন করে লাভবান হবার মধ্য দিয়ে শেষ হাসি হাসেন।

 

স্থানীয় কৃষক ও কৃষিবিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমগ্র উপজেলায় এ মৌসুমে কমবেশি পুদিনার চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পুদিনার চাষ হয় দক্ষিণ সীতাকুণ্ডের সলিমপুর, ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে।

 

পুদিনার চাষ বিষয়ে ভাটিয়ারীর খাদেমপাড়া গ্রামের কৃষক মো. ফরিদুল আলমের পুত্র কৃষক মো. শিবলু বলেন, রমজানকে সামনে রেখে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে ১৩০ শতক জমিকে পুদিনা পাতার চাষ করেছি। এ জমি চাষে খরচ পড়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। বর্তমানে পুদিনার দাম অনুসারে বিক্রি হবে অন্তত ৩ লাখ টাকা।

 

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুই দফায় পুদিনা বিক্রি করেছি। এর আগে গত বছর মাত্র ৮০ শতক জমিতে পুদিনা চাষ করেও লাভবান হয়েছিলাম। তাই এবার চাষ আরো বাড়িয়েছি। এ এলাকায় মো. শফি, মো. শাহ আলম, সেলিম, শাহাজানসহ কমপক্ষে ৭০জন কৃষক কম বেশি পুদিনার চাষ করেছেন। সবার জমিতেই ভালো ফলন হয়েছে।

 

এ এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতা ও পরামর্শে পাহাড়ের পাদদেশে কৃষক পরিবারগুলো ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। প্রতিবছর রমজানের এমন সময়ে এখানকার কৃষক পাইকারিতে পুদিনা বিক্রি করে অর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। এবারও অধিক লাভের আশায় তারা আগের চেয়েও বেশি পরিমাণ পাহাড়ের পাদদেশে পুদিনার চাষ করেছেন।

 

তিনি বলেন, শুধু ভাটিয়ারিতেই অন্তত ১০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পুদিনার চাষ হয়েছে। অপর দিকে সোনাইছড়ি এলাকার পুদিনা চাষি মো. নুরুন্নবী বলেন, আমি ৭০ শতক জমিতে পুদিনার চাষ করেছি। এখান থেকেই প্রায় ২ লাখ টাকা আয় করব বলে আশাবাদী। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকারও বেশি পুদিনা বিক্রি করেছি। এই মাসে সব পুদিনা বিক্রি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, তার পুদিনা চাষ ও বিক্রির জন্য এলাকার ৩ নারী-পুরুষ কাজ করেন। তাই এ চাষে শুধু তিনি লাভবান নন, এলাকার মানুষও লাভবান হচ্ছেন।

 

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, গতবছর ১৫ হেক্টর জমিতে ১০৫ কৃষক ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করে ছিলেন। চলতি বছরে তা বেড়ে উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে ২১০ জন কৃষক পুদিনার চাষ করেছেন। যা বিক্রি করলে অন্তত কোটি টাকা আয় হবে। সারাবছর পুদিনার চাষ হলেও প্রতিটি রমজানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এ পুদিনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে আগত পাইকার। এ পুদিনা বহু রোগের ঔষুধ হিসেবেও কাজ করে। তাই খাবারের সাথে এটি থাকলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট