চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘুমের ওষুধ দিয়ে অচেতন, এরপর ভাড়াটে খুনির সহায়তায় বৈদ্যুতিক শকে স্বামীকে হত্যা

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

২৪ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

মিরসরাইয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রবাস ফেরত স্বামী এমদাদুল হককে (৪৮) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন ঘাতক স্ত্রী নারগিস মোস্তারি (৪০)। বৃহস্পতিবার (গতকাল) চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন নারগিস ও ভাড়াটে খুনি আইয়ুব নবী। নিহত এমদাদুল হক উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর গ্রামের ফরাজি বাড়ির মৃত মনছুর আহম্মদের পুত্র।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত এমদাদের ছোট ভাই কামাল পাশা বাদি হয়ে বুধবার (২২ মার্চ) রাতে নারগিস মোস্তারি (৪০) ও আইয়ুব নবীকে (২২) আসামি করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নারগিস সাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্য সাহেরখালী গ্রামের আলা মিয়া চৌধুরী বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। আইয়ুব নবী একই বাড়ির নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় দিন মজুর।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এমদাদের স্ত্রী নারগিস জানান, ২০০৪ সালে এমদাদের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রবাসে থাকতেন। প্রবাসে থাকাকালীন ঠিকমতো টাকা পয়সা দিতো না, অনেক কষ্ট দিতো। এরমধ্যে তাদের দুটি সন্তারে জন্ম হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বামী একেবারে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পরও ঠিকভাবে টাকা পয়সা খরচ করতো না। এনিয়ে তার সাথে আমার প্রায় সময় ঝগড়া হতো। তার আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে মেরে ফেলার মনস্থির করেছি। এরপর বিষয়টি আমাদের বাড়ির কাজের লোক আইয়ুব নবীকে বলি। সে প্রথমে রাজি না হলেও পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে খুন করতে রাজি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার তিনদিন আগে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি ওয়াহেদপুরে চলে আসি। আসার সময় সাহেরখালী ভোরের বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে সাথে নিয়ে আসি। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ মার্চ) আছরের পর রান্না করা সেমাইয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিই। সেমাই খেয়ে স্বামী অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর আইয়ুব নবীকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সে আমার ঘরে আসে। তখন আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরে আসে। তখন তাকে বলি ডাক্তার এসেছে, তোমাকে চিকিৎসা করতে। এরপর আমি একহাত চেপে ধরি, আইয়ুব নবী আরেক হাতে জিআই তার পেঁচিয়ে মাল্টিপ্লাগ থেকে সংযোগ লাগিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
রাত ২টায় আমার দেবর কামাল পাশাকে ফোন করে তার ভাই বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানাই।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামাল পাশা জানান, আমরা শুরু থেকে বলেছি। আমার ভাইকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, এমদাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী নারগিস ও ভাড়াটে আইয়ুব নবীকে আসামিকে করে তার ছোট ভাই কামাল পাশা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজারহারনামীয় দুই আসামি গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার (গতকাল) সকালে আদালতে প্রেরণ করি। বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে দুই আসামি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার আলামত জিআই তার, মাল্টিফ্লাগ ও ৫০০ টাকার একটি নোট উদ্ধার করেছি।

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট