চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৩১ ঘণ্টা পর তুলার গোডাউনের অগ্নি নির্বাপক কাজ সমাপ্ত ঘোষণা

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

১২ মার্চ, ২০২৩ | ৭:৪২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় তুলার গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ৩১ ঘন্টা পর আগুন সম্পূর্ণরূপে নিভিয়ে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

 

রবিবার (১২ মার্চ) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরায় অবস্থিত ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের (ভাড়া নেওয়া) একটি সুবিশাল তুলার গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এই আগুন অল্প সময়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে খবর দেয়া হয় সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসকেও। পযায়ক্রমে অগ্নি নির্বাপনে যোগ দেয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক টিম। সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট একযোগে কাজ করতে থাকলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ অবস্থায় রাত ৮টার দিকে সেখানে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান।

 

তিনি এসে জানতে পারেন এলাকায় তীব্র পানি সংকট থাকায় দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনতে হচ্ছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কাছে পানিবহনকারী গাড়ির সংখ্যা খুব বেশি নেই। ফলে তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ফাইটার দলের সহযোগিতা কামনা করলে রাত ১০টার পর তারাও এসে অগ্নি নির্বাপনে যোগ দেন এবং কুমিরা ছাড়াও সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নিয়ে গিয়ে আগুনে ঢালতে থাকেন। এভাবে তিনটি বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সন্মিলিতভাবে অগ্নি নির্বাপনের কাজ করতে করতে সারারাত কাজ করার পর সকাল ৯টার দিকে আগুন অনেকটাই নিভে যায়।

 

ফলে উদ্ধার কাজ শেষ করে চলে যায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ফায়ার ফাইটার দল। তবে এরপরও চারিদিক থেকে ধোঁয়া উঠতে থাকে। ফলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যান। এভাবে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে অফিসিয়ালি আগুন নিভে গেছে ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তবে এরপরও যেহেতু সেটি তুলার গোডাউন সেখান থেকে আবারো আগুন জ্বলতেও পারে এমন আশংকায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটকে সেখানে রাখা হয়েছে।

 

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল পূর্বকোণকে বলেন, এ ধরনের আগুনে উপরে নিভলেও ভেতরে অনেক সময় থেকে যায় এবং যেকোন সময় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। শনিবার ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলসে যে আগুন লাগে তা রবিবার সকাল ৯টায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসে। কিন্তু তখনো বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া উঠতে থাকায় আমরা কাজ চালিয়ে যাই। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আমরা অফিসিয়ালি অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছি। এখন আর আগুন কিংবা ধোঁয়া নেই। তবে এ ধরনের আগুন তুলার ভেতরে যদি থেকে যায় তা অল্প পরিসরে হলেও জ্বলে উঠতে পারে। এ আশংকায় আমরা একটি ইউনিটকে সেখানে আপাতত রেখে দিচ্ছি। এটি কাল পযন্ত থাকবে। পরবর্তী আমরা আবার সিদ্ধান্ত নেব।

 

তিনি বলেন, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ কি তা তদন্ত কমিটি বলবে। এই আগুনে ২ হাজার ৭’শ টন তুলা পুড়ে গিয়ে ১০০ কোটি টাকার সম্পদহানি হয়েছে বলে ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস মালিক পক্ষ দাবি করেছেন। কিন্তু আমরা এখনো কোন ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করতে পারিনি। তদন্ত সাপেক্ষে তা করতে হবে।

 

সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকান্ডের বিভিন্ন কারণ পাওয়া যাচ্ছে। কোনটি সত্য তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।

 

প্রসঙ্গত, এই অগ্নিকাণ্ডের পর শনিবার রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট