চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বছর পেরিয়ে এল এবার ‘সুখবর’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর কর্ণফুলী নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনরোধে আশ্বাস দিয়েছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। উপস্থিত ছিলেন বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদও। ২০২১ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ের কারণে এক বছর ধরে আটকে রয়েছে প্রকল্পের ডিপিপি।

 

প্রকল্প প্রস্তাবনায় মেয়াদকাল ধরা হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্প শেষ করার কথা রয়েছে। সরকারের অর্থায়নে প্রকল্প ধরা হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে চাপা পড়ে প্রকল্পটি।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (রাঙামাটি বিভাগ) তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বকোণকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী ও সংযুক্ত খালের ভাঙনরোধ প্রকল্পটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর একনেক সভায় যাচ্ছে। পানিসম্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি এগোচ্ছে। আশা করছি, চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকল্পটি একনেক সভায় পাস হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেড় লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবে।’ পাউবো সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে প্রকল্পটির ডিপিপি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কর্ণফুলী নদী, বোয়ালখালী-চন্দরিয়া ও রায়খালী খালসহ সংলগ্ন খালের ভাঙনরোধ প্রকল্পটি কাটছাঁটের পর ১৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয় ও নতুন প্রকল্পে নিরুৎসাহিত করার কারণে এক বছর ধরে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদী ও খালের ভাঙন দীর্ঘদিনের। ভাঙনরোধে আশ্বাস ছাড়া বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রয়াত সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল ৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়াও রাঙ্গুনীয়া সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্বাচনী এলাকা শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নে ভাঙনরোধে সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। মোছলেম উদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নদী ও খালের ভাঙনরোধে বড় প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পের ডিপিপিও জমা দেওয়া হয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বড় প্রকল্পে সরকারের অর্থ সাশ্রয়ের ফাঁদে পড়ে বছরখানেক আটকে থাকে প্রকল্পটি। ইরিমধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মারা যান মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকল্পটি একনেক সভায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

 

২০১৮ সালের এপ্রিলে কর্ণফুলী নদীর ভাঙনরোধে ৩৫১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রকল্পটি আর এগোয়নি। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ভাঙনরোধে নতুন করে প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় বোর্ড।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটির খোঁজ-খবর নেন। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকার পর এখন প্রকল্পটি পাস করা হয়। একনেক সভায় পাঠানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একসঙ্গে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনরোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। জীবদ্দশায় প্রকল্পটি পাস করানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। এখন মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

 

প্রকল্পে যা রয়েছে

 

প্রকল্পে কর্ণফুলী নদীর বামতীরে দুই দশমিক ৪২৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধে প্রতিরক্ষা বাঁধ, বোয়ালখালী খালের দুই তীরে দুই দশমিক শূন্য ৫০ কিলোমিটার, রায়খালী খালের উভয় তীরে এক দশমিক তিন শ কিলোমিটার, ছন্দারিয়া খালের উভয় তীরে শূন্য দশমিক ৯২৫ কিলোমিটার, ভারাম্বা খালের উভয় তীরে ৫ শ মিটার, নাজিরখালী খালের ডানতীরে দুশ মিটার অংশে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কর্ণফুলী নদী ও সংযুক্ত খালের ভাঙনরোধে ৭ দশমিক দুইশ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট