চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আকৃতি ও বয়সে ছোট হওয়ায় আমাকে গুপ্তচরের দায়িত্ব দেয়া হয়

অনুপম কুমার অভি

১০ মার্চ, ২০২৩ | ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল ইসলাম ভেদু পুকুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পুকুরিয়া সবুজ পাড়া গ্রামের মৃত ওমদা মিয়ার ছেলে। তিনি ২ ছেলে, ৩ মেয়ের জনক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর পাক হানাদার বাহিনী এদেশের রাজাকার আল-বদরদের নির্যাতন থেকেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ১৬ এবং বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্র। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে শফিকুল ইসলাম ভারতের দেমাগ্রী থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসার পর বাঁশখালী পুকুরিয়া কুন্ডস্টেট (বর্তমান চা-বাগান) পাহাড়ি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। ঐ ক্যাম্পে আমিসহ ৩২ জন যুবক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দিই। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অস্ত্র প্রশিক্ষক ছিলেন সাবেক সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদের। ১৫/২০ দিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর পুকুরিয়া নাটমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চন্দনাইশ বরকলের মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ছেলে গ্রুপ কমান্ডার শাহজাহান ইসলামাবাদী, আনোয়ারার তৈলারদ্বীপের গ্রুপ কমান্ডার আবদুল লতিফ, বাঁশখালীর একটি গ্রুপের কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের চিহ্নিত করে আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল ইসলাম ভেদু বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় আকৃতি ও বয়সে ছোট হওয়ায় সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে সোর্স/গুপ্তচর হিসাবে দায়িত্ব দিতেন। আমি আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ, বরুমছড়া, বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা, চন্দনাইশের বরকল, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতাম। সেনা সদস্য সার্জেন্ট মহিউল আলম গ্রুপ আমাদের গ্রুপে যোগ দেন। শফি ভাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেন। খবর আসে বাণীগ্রাম-সাধনপুরে মহিলাদের উপর নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ চলছে। আমাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদে রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সময় গ্রেনেড চার্জ করলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউল আলম শহীদ হন। তাকে পরবর্তীতে বাণীগ্রাম লম্বাশিয়া পাহাড়ি এলাকায় দাফন করা হয়। ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উল কবির চৌধুরী, ডা. এস. এম ইউসুফ, মোক্তার আহমদ চৌধুরী, খোন্দকার ছমিউদ্দিন, শফিকুল ইসলাম ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গুনাগরী ওয়াপদা অফিসে পাকিস্তানি রাজাকার, আল-বদর সৈন্যদের উপর আক্রমণ করি। এ সময় অনেক স্বাধীনতা বিরোধী মারা যায়। ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।

 

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২২টি মামলার আসামি হয়ে ৩ বছর ১০ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট