চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এতো অনিয়ম সীমা অক্সিজেনে!

নাজিম মুহাম্মদ

৭ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

৩০ বছর আগে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হলেও সেটি অপারেট করতেন দুইজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। ঘটনার দিন প্ল্যান্টে ওই দুই অপারেটরও ছিলেন না। অধিকাংশ সময় শ্রমিকরা প্ল্যান্ট থেকে কলামের মাধ্যমে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরানোর কাজ করতেন। সেদিনও শ্রমিকরা সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরছিলেন। অথচ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী স্পর্শকাতর কাজটি করার কথা। চীন থেকে আনা যন্ত্রপাতি স্থাপন করার পর বিগত ৩০ বছরে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি কখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একটি কারখানা করতে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র রয়েছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান কারখানাটির বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নেয়নি।

 

এদিকে, সীতাকুণ্ডে কয়টি কারখানা রয়েছে তার তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে। কলকারখানা পরিদর্শক বললেন, সীতাকুণ্ডে কারখানার সংখ্যা ৫৭৫, উপজেলা চেয়ারম্যানের দাবি সাড়ে তিনশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন ৪৮০টি।

 

গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি ও কারখানা মালিকদের বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে। সীতাকুণ্ডের কলকারখানার সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করতে ফায়ার সার্ভিস ও কলকারখানা পরিদর্শককে নির্দেশনাও দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

 

সভায় উপস্থিত ছিলেন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মামুন উদ্দিন। দুর্ঘটনা সম্পর্কে তার কাছেই প্রথমে বিস্তারিত জানতে চান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। মামুন বলেন, ১৯৯৩ সালে তার বাবা অক্সিজেন প্ল্যান্টটি  প্রতিষ্ঠা করেন।  চীন থেকে যন্ত্রপাতি এনে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়। কারখানায় কোনো অনিয়ম ছিল না। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। তিনি বিস্ফোরণের ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করেন। কারখানায় ৫৫ থেকে ৬০ জন লোক কাজ করে এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও মামুন বলেন, ঘটনার দিন অফিসের দুইজন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন লোক ছিলেন। সবমিলিয়ে ১৯ জন আহত হয়েছেন। ছয়জন মারা গেছেন।  বিস্ফোরণে বাইরের লোকজনও হতাহত হয়েছে।

 

যন্ত্রপাতিগুলো কখন স্থাপন করা হয়েছে কিংবা কখনো পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জেলা প্রশাসকের এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন উদ্দিন বলেন, ৩০ বছর আগে যন্ত্রপাতিগুলো চীনের প্রকৌশলীরা স্থাপন করেছেন। তারা তিনমাস দেখভাল করেন এবং সেখানে কর্মরতদের দুই মাস প্রশিক্ষণ দেন। পরবর্তীতে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কারখানাটি পরিদর্শন করতে কখনো আসেননি।

 

প্রশিক্ষিত অপারেটর দিয়ে প্ল্যান্টটি পরিচালনা করা হতো কিনা এ কথা জানতে চাইলে মামুন উদ্দিন জানান, দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি চালানো হত। সংশ্লিষ্ট কাজে পড়াশোনা আছে এমন প্রকৌশলী দিয়ে প্ল্যান্ট চালানোর নিয়ম থাকলেও আমাদের সেটি ছিল না। তবে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিল বিধায় তাদের দিয়েই কারখানাটি পরিচালনা করা হত, বলেন এমডি মামুন।

 

সীমার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মামুন উদ্দিন  তাদের প্ল্যান্টে সব নিয়ম মানা হয় দাবি করলে তা নাকচ করে দেন বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, কারখানাটিতে অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করা হত। সেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার পাওয়া গেছে যা ওই কারখানায় রাখার অনুমোদন নেই।

 

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত জানান, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বেশকিছু সমস্যা ছিল। তাদেরকে সমস্যাগুলো সমাধান করতে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারা তিনমাস সময় চেয়েছিল। এ সময়সীমা পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

 

এ সময় জেলা প্রশাসক কলকারখানা পরিদর্শন কর্মকর্তার কাছে সীতাকুণ্ডে কয়টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কারখানা রয়েছে তার তালিকা রয়েছে তা জানতে চাইলে তার তথ্য দিতে পারেননি উক্ত কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক কল কারখানার হালনাগাদ তালিকা করতে নির্দেশনা দেন।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন  বলেন,  সীতাকুণ্ডে ছোট, বড় ও মাঝারি ৩৫০টি শিল্প কারখানা আছে। ২০০ এর বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড আছে। সীতাকুণ্ডের লোকালয়ে একাধিক কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি রয়েছে। একটি কারখানা করতে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র লাগে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তদারকি থাকলে লোকালয়ে এভাবে অনিয়মে ভরা শিল্প কারখানা গড়ে উঠার কথা নয়। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ছাড়পত্র দিয়ে দেয়।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট