চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিলিন্ডারে নয়, গ্যাস রিজার্ভের কলাম বিস্ফোরণ : তদন্ত কমিটি

সৌমিত্র চক্রবর্তী

৬ মার্চ, ২০২৩ | ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় বিস্ফোরণের নেপথ্যে ছিলো গ্যাস রিজার্ভের কলাম বিস্ফোরণ, সিলিন্ডার নয়। তদন্ত কমিটি ১ম দিনের অনুসন্ধানশেষে তাদের প্রাথমিক এ ধারণা তুলে ধরেন। ২৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযানও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যদিকে এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। ৬ জন নিহত ও ২৮ জন আহতের ঘটনায় মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহতরা হলেন, লক্ষ্মীপুর কমলনগর থানার চর লরেন্স গ্রামের মহিজল হকের পুত্র সালাউদ্দিন (৩৩), নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার ছোট মনগড়া গ্রামের খিতিশ রংদীর পুত্র রতন নকরেক (৫০), নোয়াখালী সুধারামপুর থানার ওলিপুর গ্রামের মৃত মকবুল আহমেদের পুত্র মো. কাদের মিয়া (৫৮), সীতাকুণ্ডের মধ্যম সলিমপুর গ্রামের মৃত আবুল বশরের পুত্র ফরিদ (৩২), ভাটিয়ারির জাহানাবাদ গ্রামের মৃত ইসমাইলের পুত্র শামছুল আলম (৬৫)। আহত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 

রবিবার ফায়ার সার্ভিসের দুটি উদ্ধারকারী দল অভিযানে নতুন করে কোন হতাহতের সন্ধান মেলেনি। ফলে বিকাল সাড়ে ৪টায় উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক অভিযান বন্ধ ঘোষণা করেন। অন্যদিকে এদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, এখানে যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা সিলিন্ডার থেকে নয়। এটি যে কলামের মধ্যে দিয়ে গ্যাস রিফুয়েলিংয়ের জন্য প্রেশার দেয়া হয় সে কলাম ফেটে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মনে করছেন। প্রতিষ্ঠানটির বিস্ফোরক লাইসেন্স আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।

 

এদিন বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এ সংক্রান্ত গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রায় দেড় ঘণ্টা তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তারাও ধারণা করছেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এমনটা ঘটেনি। এটি ঘটেছে প্ল্যান্ট থেকে যে কলামের মধ্য দিয়ে গ্যাস নির্গত হয় সেটিতে। তারা মনে করছেন গ্যাস রিফুয়েলিংয়ের জন্য প্রেশার দেয়ার সময় এ ঘটনা ঘটেছে। যদিও প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও ঐ যন্ত্রে ছিলো। কিন্তু সেটি কোন কারণে কাজ না করায় এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ৫ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে।

 

অন্যদিকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে সোনাইছড়ি ও আশপাশে শত শত ঘর-বাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। শোকের মাতম চলছে সীতাকু-ের নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারে। বারবার এ ধরণের ঘটনার পরও মালিক পক্ষের গাফিলতির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, সোনাইছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মুনীর আহমেদ, ভাটিয়ারির ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন।

 

সীতাকুণ্ডের ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দুর্ঘটনাটির পর আমরাও উদ্বিগ্ন। হতাহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে। কিন্তু আমরা চাইব না আর কোন দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই এখন কারখানাগুলোর কার্যক্রম আরো গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে। সীতাকু- থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণে কেউ যদি দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মামলা করতে চায় আমরা মামলা নেব। আর কেউ না করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আমরাই মামলা করব।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট