৫ মার্চ, ২০২৩ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব সংবাদদাতা
বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়নের জনবসতিশূন্য আবাদি বিলে সেতু নির্মাণ নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৬৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৭৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও কাবিখা প্রকল্পের অধীনে ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাদি জমির ওপর বানানো হয় ২০ ফুট প্রস্থের রাস্তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের একটি সি-িকেটের কেনা জমির কদর ও দাম বাড়ানোর জন্য সরকারি প্রকল্পে সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. নুরুন্নবী জানান, ‘সেতু নির্মাণ হওয়ার পর প্রতি শতক জমির মূল্য এখন ২-৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে এই জমির মূল্য ছিল ২০-২৫ হাজার টাকা। রাস্তার কাজ শেষ হলে দাম আরও বাড়বে। ওই বিলে তার নিজের ২ একর ও ওয়াকফ্ধসঢ়; এস্টেটের নামে আরও ৪ একর জায়গা রয়েছে।’ জানা গেছে, ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গার উপর রাস্তা নির্মাণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয়রা। জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর লিখিত আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা। গত ৩০ জানুয়ারি অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিন পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেন ইউএনও। ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন এসি ল্যান্ড। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের নির্দেশে সরজমিনে তদন্ত করেছি। সবপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর রাস্তা তৈরি হচ্ছে তা নিশ্চিত হয়েছি।’ স্থানীয়রা জানান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে জমি বেচাকেনার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের জমির দাম বাড়াতেই সরকারি অর্থায়নে সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপর ২০৭ ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৬০০ ফুট রাস্তা নির্মাণাধীন রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি প্রকল্প থেকে একাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/ কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এপ্রোচ সড়কের জন্য কাবিখা প্রকল্প থেকে আড়াই টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুজন কান্তি দাশ বলেন, ‘সেতুটি কৃষকদের চাষাবাদ ও ফসল আনার সুবিধার্থে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কৃষকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তা তৈরির জন্য কাবিখা প্রকল্পের আওতায় আড়াই টনের একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সদ্য প্রয়াত এমপি মহোদয় তার বিশেষ বরাদ্দ থেকে আরও একটি প্রকল্প দিয়ে গেছেন।
শাকপুরা ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক মানিক বলেন, ‘সেতু হওয়ায় জমির মূল্য বেড়েছে। রাস্তা হলে আরও বাড়বে। রাস্তার কাজ ৩০০ ফুট শেষ হয়েছে। আরও ৬০০ ফুট রাস্তা নির্মাণ করা হবে।’
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক এম সোলাইমান ডালিম বলেন, ‘রাস্তা তৈরির কারণে ২০-২২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের প্রয়োজন হলে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তাই ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি।’
পূর্বকোণ/একে