চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ইন্দ্রপুল ধ্বংস, গৈড়লার টেকে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে জয় লাভ করি

রবিউল আলম ছোটন

৪ মার্চ, ২০২৩ | ১:২১ অপরাহ্ণ

পটিয়া উপজেলার তেকোটা গ্রামের মনোহর আলীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ছাত্রজীবনের শুরু হতে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি সৈনিকদের প্রতিরোধ করতে এলাকার যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে গৈড়লা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শত শত যুবকদের সকলবেলা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি। সামশুজ্জামান ভাইয়ের একটি পয়েন্ট ২২ রাইফেল ছিল এবং একজন ইপিআর একটি রাইফেল ছিল। ট্র্রেনিং ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলে। ১৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় পটিয়া থানা মোড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলায় অনেক লোক হতাহত হয়। বিমান হামলার পর আমানের ট্রেনিং বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ এর এপ্রিলের শেষে আমাদের নেতা কমরেড পূর্ণেন্দু কানুনগো আমাকে ও সুজিত বড়–য়াকে আমাদের গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরে গোপনে বৈঠক করে জানালেন, ভারতে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা হচ্ছে, তাই আমাদের ভারতে যেতে হবে। কথামত দুই দিন আমি ও সুজিত ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গোমদ-ীর বকতেয়ার নোমানির বাড়িতে যাই। সেখান থেকে গাইডার আমাদের নেয়ার কথা। কিন্তু ঐ দিকে বিকেলে খবর আসে আমাদের নেতা পূর্ণেন্দু কানুনগো কর্ণফুলী নদী পাড় হওয়ার সময় মুসলিম লীগের দালালদের হাতে ধরা পড়েছেন। এর কয়েক দিন পর কমরেড কানুনগো দালালদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আমার নিকট আসেন। বিকল্প পথে মিরসরাই হয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তার নির্দেশনা মোতাবেক অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সাথে মিরসরাই ফেনী দিয়ে চৌদ্দগ্রামে রাতযাপন করি কাজী বাড়িতে। পরদিন সকাল বেলা চৌদ্দগ্রাম জগৎনাথ দিঘির পাশ দিয়ে বেলোনীয়া বর্ডার অতিক্রম করি। নেপোনি শহরে সিপিআই ক্যাম্পে রাত যাপনের পরদিন আগরতলা ক্রেপ্ট হোস্টেল পৌঁছে দেখি সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দ অবস্থান করছেন। ক্রেপ্ট হোস্টেলে বেগম মতিয়া চৌধুরী আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। আমরা ভাত খেয়ে সেখান থেকে একটি স্কুলে যাই, সেখানে দেখি ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ইউনিয়েনের কয়েকশত নেতা কর্মচারী অবস্থান করছেন। সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর অধ্যাপক মাহাবুবুল হকের পরিচালনায় বি.এস. হোস্টেলে দুই দিন রশিদ আসলেন এবং সবাইকে নিচে নেমে লাইন ধরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তিনি আমাদের ব্রিফ করে বললেন- আমাদের চূড়ান্ত ট্রেনেং এর জন্য পাঠানো হচ্ছে। তাই আমাদের জাতীয় পতাকা দিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করালেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়ি এসে আমাদের আগরতলা বিমান বন্দরে নিয়ে গেলেন। রাশিয়ার একটি কার্গো বিমানে করে আমাদের আসাম সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সামরিক বাহিনীর গাড়িতে করে তেজপুর সেনা নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের দুই মাসের বেশি সময় গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, ট্রেনিং শেষে ত্রিপুরা বাইকোরা নামক স্থানে ক্যাম্পে আসা হয়, কয়েকদিন পর সাবরুম বর্ডার হয়ে ভারতীয় বর্ডার গার্ডের সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রবেশ করি। বর্ডার পাড় হয়ে চাকমা উপজাতির সহযোগিতায় (কারণ আমাদের সমস্ত গোলা বারুদ বহন করেন তারা) ফটিকছড়ি নারায়ণ হাট হয়ে বোয়ালখালী চলে আসি। বোয়ালখালী থেকে যে দিন পটিয়া গোপালপাড়া প্রবেশ করি, সেদিন সকাল বেলা আমাদের সাথে পাক বাহিনীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাক বাহিনীর সহযোগী কয়েকজন মারা গেলেও আমাদের কেউ হতাহত হননি। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে প্রবেশের পর হতে করলডেঙ্গা রসহরী মহাজনের বাড়িতে ক্যাম্প এবং করলডেঙ্গা পাহাড়ে ছালতাছড়ি নামক স্থানে ট্রেনিং সেন্টার করে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ধলঘাট স্টেশন দখলের যুদ্ধ, ইন্দ্রপুল ধ্বংস করা, গৈড়লার টেকে ঐতিহাসিক সম্মুখযুদ্ধ এবং যুদ্ধে জয় লাভ, পটিয়া থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ ছোট খাটো আরো অনেক অপারেশনে অংশগ্রহণ করি।

পূর্বকোণ/একে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট