চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়ে ফিরছেন কফিনে

মোহাম্মদ আলী 

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু। নির্মম ভাগ্যটি জুটেছে অভাগা পিতার ললাটে। একমাত্র ছেলের সোনালী ভবিষ্যতের আশায় সন্তানকে পাঠিয়ে ছিলেন সুদূর আমেরিকায়। কিন্তু সেখানে সোনালী ভবিষ্যত নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় চিরতরে নিভে গেল মা-বাবার তিলে তিলে লালন করা স্বপ্ন। তাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নয়, কফিনে করে দেশে আসছেন মুহিতুল ইসলাম। উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি জমানোর ১৪ মাসের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয় তার। আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে দীর্ঘ পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী মুহিতুলের মৃত্যুতে কাঁদছেন মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও শুভান্যুধায়ীরা। মুহিতুল ইসলাম রাউজানের মুন্সিরঘাটাস্থ আবদুল মালেক পোস্ট মাস্টার বাড়ির আবু মাসুদ আজাদ ও রোকসানা বেগমের একমাত্র পুত্র। নগরীর কসমোপলিটন আবাসিকে তাদের বাসা। স্বজনরা জানায়, উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে মুহিতুল ১৪ মাস আগে স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন তিতু হওয়ার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মুহিতুল অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। আমেরিকায় তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরিও করতেন। এর মধ্যে ৬ মাস আগে একবার দেশেও আসেন। মাকে হজ্বও করান। মুহিতুল ইসলামের স্বপ্ন ছিল একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। শুধু লেখাপড়া নয়, সহপাঠীদের নিয়ে আমেরিকায় ‘টিম বাংলাদেশ’ নামে একটি মানবিক সংগঠনও গঠন করেন তিনি। এ সংগঠন থেকে সমাজের অভাবী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করতেন।

 

নগরীর কসমোপলিটন আবাসিকে মুহিতুল ইসলামের বাসায় গেলে তার বাবা আবু মাসুদ আজাদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মুহিতুল অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী শিক্ষার্থী ছিল। সে ন্যাশনাল কারিকুলামে ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করেছে। নগরীর সাইডার স্কুল থেকে মেট্রিক ও ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে মুহিতুল ছিল ছোট। তার একমাত্র বোন লন্ডনে স্বামীর সাথে বসবাস করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তার স্বামী আমেরিকায় ছুটে যান।’

 

আমেরিকার বোস্টন অঙ্গরাজ্যের কমিউনিটি অর্গানাইজার ও বিশিষ্ট সমাজসেবক রাউজানের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কে মোরশেদ এবং রাউজানের নোয়াপাড়া পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়াশিংটন বসবাসরত অপর বাংলাদেশি মো. মিজানুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মুহিতুল ইসলাম বোস্টন অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন। তিনি বোস্টন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। ১৪ মাস আগে তিনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আমেরিকায় আসেন। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কার্যালয়ের শহীদ মিনারে ফুল দিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুহিতুল তার অপর ৪ সহপাঠীকে নিয়ে বোস্টন থেকে কারে করে যাত্রা করেন।

 

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাসের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে পুনরায় বোস্টনে ফিরে আসার পথে সকাল পৌনে ৮টায় জাতীয় চিড়িয়াখানার সন্নিকটে কানেকটিকাট এভিনিউতে (নর্থ-ইস্ট ডিসি) বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী একটি গাড়ি এসে তাদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এরপর আরো দুটি গাড়ি দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটিতে ধাক্কা দেয়। দুমড়ে যায় বাংলাদেশিদের বহনকারী গাড়িটি। দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে অকুস্থলে আসা ওয়াশিংটন ডিসির দমকল বাহিনী এ দুর্ঘটনায় আহত সাত জনকে নিকটস্থ তিনটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশি মুহিতুল ইসলামকে (২১) জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, রাজু আহমেদ (২৩) এবং হুমায়ুন আহমেদকে (২৩) মেড স্টার হাসপাতাল এবং নাইমুল ইসলাম সজীবকে (২৪) হাওয়ার্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বোরহানউদ্দিন জাদিনকে (১৯) জরুরি বিভাগে চিকিৎসার পর রিলিজ দেয়া হয়।

 

এরমধ্যে মুহিতুল দীর্ঘ পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ ও নোয়াখালীর বাসিন্দা নাইমুল ইসলাম সজীবের অবস্থা সংকটাপন্ন। দুর্ঘটনার শিকার অপর দুই বাংলাদেশি রাউজানের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন জিদান ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।’

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট