চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সব কয়লাভিত্তিক প্লান্ট থেকে একই দামে কেনা হবে বিদ্যুৎ

বাঁশখালী সংবাদদাতা

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫০ অপরাহ্ণ

আদানিসহ দেশের সব কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট থেকে সরকার একই দামে বিদ্যুৎ কিনবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, আমরা যাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেব- পায়রা আছে, রামপাল আছে, এসএস পাওয়ার আছে, আদানি আছে, সব দাম একই রকম হবে। এক মাস আগে এক রকম ছিল কয়লার দাম। এক মাস পরে অন্য রকম। জ্বালানির দাম যা, তার হিসাব অনুসারে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ হবে।

রবিবার দুপুরে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা জানান।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি জ্বালানির দাম সহনশীল হয়, যদি কয়লার দাম সহনীয় হয়, তাহলে দেশে বিদ্যুতের কোনো অভাব হবে না। আমাদের ক্যাপাসিটি ২৬ হাজার মেগাওয়াট। লাগবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এসএস পাওয়ার প্লান্ট যত তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ দিতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি ঘাটতি কমে আসবে।

দেশে গত কয়েকমাস ধরে চলা বিদ্যুৎ সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে তিনি বলেন, পৃথিবী যুদ্ধে মাতোয়ারা হলে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির জন্য আমাদের মতো দেশকে খেসারত দিতে হয়। এটা যদি শুধু বাংলাদেশে হতো বলতাম না, সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। শুধু জ্বালানিতে না, খাদ্যশস্য, ফার্টিলাইজার, ডলারের দামও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক দূরদর্শিতার সঙ্গে এই সংকট পার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, কাল যদি ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ বন্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশে কোনো লোডশেডিং থাকবে না। তবে বন্ধ না হলে সবাইকে মিলে সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজন যদি কমিয়ে আনি, তাহলে এটা মোকাবিলা করতে পারবো। বড়লোক যারা এসি চালায় সারাবছর, মসজিদে যদি এসি চলে সারাবছর, এভাবে চললে তো পারবো না।

এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাবু বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে দুটি টারবাইনের একটি চালু করে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারবো আমরা। জুনের মধ্যে অন্য টারবাইনও চালু করা হবে। আমাদের প্লান্টে কয়লার সংকট হবে না। ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে আমরা নিরবচ্ছিন্ন কয়লার ব্যবস্থা করেছি। এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৯ টাকার মতো পড়বে। কয়লার দাম বাড়লে বা কমলে এটি সমন্বয় করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান, পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইনসহ বিদ্যুৎ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও এস আলম গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্লান্ট অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মাণ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ এস আলম এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো থ্রি। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই পাওয়ার প্লান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে তৈরি করা এই পাওয়ার প্লান্টের কয়লা আসবে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে। এ জন্য এই দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পন্ন করেছে এসএস পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ। চুক্তির আওতায় আগামী মার্চ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা এসে বাঁশখালী পৌঁছাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে।

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন- এই পাওয়ার প্লান্টে প্রথমে সাগর থেকে পানি এনে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করা হবে। এরপর তা বয়লারে কয়লার তাপে ফুটিয়ে বাষ্প করা হবে। বাষ্প থেকে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে ঘুরানো হবে টারবাইন। টারবাইন ঘুরলেই চলবে জেনারেটর। উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ। এরপর উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দিয়ে পাঠানো হবে মদুনাঘাট সাবস্টেশনে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ চলে যাবে জাতীয় গ্রিডে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট