চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সিডিএ’র কর্ণফুলী আবাসিক

পানি সংকটে হচ্ছে না আবাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

২৯ বছর আগে কর্ণফুলী নদীর বামতীরে একটি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ১৯৯৪ সালে বাস্তবায়ন করা সিডিএ’র এই আবাসিকে এখনো পর্যন্ত নির্মিত হয়নি একটি ভবনও। দিনদুপুরেও যেখানে যেতে ভয়ে গা ঝিমঝিম করে। আবাসিকের ভিতরে নেই কোন বাতি। তাই স্থানীয়দের কাছে এটি এখন জঙ্গল হিসেবে পরিচিত। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য সমস্যা থাকলেও শুধুমাত্র পানির সংকটের কারণে ভবন মালিকরা এখানে ভবন নির্মাণ করতে আগ্রহী হননি। পানির সংকট কেটে গেলে বাকি বিদ্যুৎসহ অন্য সমস্যাও কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জানা যায়, ২০২১ সালের ১৮ জুলাই আবাসিকের সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ সিডিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেন। এখনো পর্যন্ত কোন সমস্যার সমাধানই করেনি সিডিএ। পানির সংযোগ দেয়ার জন্য সিডিএ’র সদিচ্ছা নেই বলে জানান সমিতির নেতৃবৃন্দ। পানির সংযোগ দেয়ার জন্য সিডিএ’র কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও সুফল মিলেনি বলে অভিযোগ করছেন প্লট মালিকরা। তাই আবাসিকের কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ভবন নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন না। অন্যদিকে, ‘ভাণ্ডারজুরি প্রকল্প’ থেকে পানির ব্যবস্থা করার জন্য ওয়াসাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প চালু হলে আবাসিকের পানির সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্ধসঢ়;স।

 

কর্ণফুলী নদীর বামতীরে সিডিএ’র কর্ণফুলী আবাসিকের প্রধান সড়ক ধরে কিছুটা আগালেই একটি পরিত্যক্ত ভবনের দেখা মিলে। প্রথম দেখাতে ভবন দেখে যে কেউ মনে করবে এটি একটি ভুতুড়ে বাড়ি। সেখানে উপস্থিত থাকা সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলে জানা যায়, এটিই নাকি আবাসিকের মালিক সমিতির অফিস।

 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিডিএ’র কর্ণফুলী আবাসিকটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী, পটিয়া, আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বড় একটি অংশকে শহরমুখী হতে হবে না। বর্তমানে মইজ্জারটেক এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। নগরীর চাপ কমানোর জন্য কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ সিডিএ’র দারুণ উদ্যোগ ছিল। তবে পানির সংযোগের পাশাপাশি বিদ্যুৎসহ আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ‘বাতাসে সীসা ভাসে এবং এখানে দুই তলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না’। আবাসিকে ভবন নির্মাণ না হওয়ার দু’টি গুজব কাজ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জানতে চাইলে কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির একাধিক প্লট মালিক জানান, প্রায় তিন দশক আগে সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও পানি, গ্যাসসহ কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেনি সিডিএ। এতসব সংকটের ফলে সেখানে কেউ ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়নি।

 

জানতে চাইলে কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ সকল নাগরিক সুবিধা থাকবে বলে প্রজেক্ট প্রোফাইলে উল্লেখ ছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই সেখানে হয়নি। একটি আবাসিকে যদি পানি, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকে সেখানে মানুষ কেন ভবন নির্মাণ করবে? তাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্লট মালিকরা ভবন নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন না। এছাড়াও ‘এখানে দোতলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং আবাসিকের বাতাসে সীসা ভাসে’, এ দুটি গুজব ভবন নির্মাণ না করার পিছনে প্লট মালিকদের বেশ প্রভাবিত করেছে।

 

তিনি আরো বলেন, আবাসিকে পানির সংযোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে আমরা একাধিকবার সিডিএ চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছি। আমাদের চিঠির প্রেক্ষিতে সিডিএ সম্প্রতি ওয়াসাকে পানির সংযোগ দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখনো পানির সংযোগের কোন ব্যবস্থা হয়নি।

 

জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শাম্ধসঢ়;স বলেন, কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় ‘ভা-ারজুরি প্রকল্প’ থেকে পানির সংযোগ দেয়ার জন্য সম্প্রতি আমরা ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছি। প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমি আবাসিকে পানির সংযোগ দিতে পারিনি। ওয়াসা আমাদের কাছে আবাসিকের লে-আউটসহ আনুসঙ্গিক কিছু তথ্য চেয়েছিল, আমরা সেগুলো ওয়াসাকে সরবরাহ করেছি। আমরা আশা করছি ভাণ্ডারজুরি প্রকল্প চালু হলে কর্ণফুলী আবাসিকে পানির সংযোগ পাবে এবং সেখানে ভবন নির্মাণ হবে।

 

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে প্রায় ৫০ একর জায়গায় ৫১৯টি প্লট সম্বলিত কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ। এ প্রকল্পের প্রজেক্ট প্রোফাইলে বরাদ্দকৃত স্থানে নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, কবরস্থান, মার্কেট, নিরাপত্তা বেষ্টনী, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ থাকে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট