চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড়ি চাষাবাদে হাতি আতঙ্ক

নিজস্ব সংবাদদাতা

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:০৪ অপরাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির তাণ্ডবে চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কয়েক বছরে হাতির তাণ্ডবে ১৪ জনের মৃত্যু ও অন্তত ৩০ জন কৃষক আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৮ বছরে ১৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। আমন ও বোরো মৌসুমে খাবারের খোঁজে লোকালয়েও ছুটে আসে হাতির পাল।

 

গত ১১ সেপ্টেমর পুঁইছড়িতে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। সাধনপুর ও পুঁইছড়ি ইউনিয়ন পাহাড়ি এলাকায় দুইজন কৃষক ও কাঠুরিয়া মারা যায়। পাহাড়ি এলাকার কৃষকরা হাতি আতঙ্কে কৃষি কাজে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।

 

বন বিভাগের দাবি, খাদ্যের সন্ধানে এসে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। পাশাপাশি হাতির আক্রমণে কৃষকও মারা যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও বাঁশখালী পৌরসভায় সবজি ফলন ও ধান চাষাবাদের সুনাম রয়েছে। পাহাড়ি ও সমতলে উৎপাদিত ফসল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ৩০ ভাগ ফসল চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। এছাড়াও উৎপাদিত পান ও লিচু বিদেশেও রপ্তানি হয়।

 

বাঁশখালীতে ৭০ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। তৎমধ্যে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। ২৫০ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। উপজেলার জলদী, বৈলছড়ি, শীলকূপ, চাম্বল, পুঁইছড়ি, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বাহারছড়া ইউনিয়নে ধান ও সবজি চাষাবাদ বেশি হয়। সরল, গন্ডামারা, শেখেরখীল, ছনুয়া ও পশ্চিম চাম্বল, মনকিরচর এলাকার কিছু কিছু অংশে লবণ চাষাবাদ হয়। বাঁশখালীর উৎপাদিত লবণ দেশের ব্যাপক চাহিদা বিদ্যমান।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, কৃষকরা কৃষি কাজে মাঠে সবজি সারা বছরে উৎপাদন কাজে ব্যস্ত সময় পার করে। ৬২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। তৎমধ্যে কাকরোল ১২০০ হেক্টর, বেগুন ৫৫০ হেক্টর, আলু ৬২০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ৩৫০ হেক্টর, লাউ ৩৮০ হেক্টর, সরিষা ২৫ হেক্টর, বরবটি করলা, ঢেঁড়সসহ ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়।

 

কৃষকদের অভিযোগ, বাঁশখালী বিশাল এলাকাজুড়ে নানা ধরনের ক্ষেতের ব্যাপক চাষাবাদ হলেও হিমাগার না থাকা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উৎপাদিত ফসল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে চাষাবাদে অনীহা দেখা দেয়। পাহাড়ি এলাকায় কৃষি জমি থাকলেও বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। হাতির আক্রমণের ভয়ে কৃষকরা পাহাড়ি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। পুঁইছড়ি ও সাধনপুর এলাকায় হাতির আক্রমণে কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

 

চাম্বলের কৃষক নুরুল আবছার জানান, পাহাড়ি মাটি উর্বর। ঝর্ণা ও ছড়ার প্রবাহমান পানি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদে ব্যাপক ফলন উৎপাদন করা সম্ভব। গত মৌসুমে এক একর জমিতে আলু, বেগুন, সীম চাষ করে বাজারে সবজির ভালো দাম থাকায় খরচ পুষিয়ে ৯২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। হাতির ভয়ে পাহাড়ের নিম্নঞ্চলে অনেক অনাবাদি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে যাচ্ছে। এসব জমিতে ধান, তরমুজ ও সবজি চাষ করা গেলে অনেক টাকা আয় হবে। হাতির ভয়ে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদে অনীহা প্রকাশ করে।

 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী কৃষকরা আমন ১৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর, বোরো ১১ হাজার ১৯৫ হেক্টর, আউশ ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করে থাকেন। কৃষি কাজের অগ্রগতিতে চাষিদের মুখে হাসি ফুটলেও বিগত দিনে করোনার কারণে ফসল উৎপাদনে ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে। তাদেরকে সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। কৃষকরাও ব্যাপক উৎসাহের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। এতে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। বাঁশখালী চুনতি অভায়ারণ্য ও ইকোপার্ক রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, পাহাড়ি এলাকায় এখন চাষাবাদের জন্য কৃষকরা খুবই আগ্রহী। এক সময় পাহাড়ি এলাকার জমিগুলো অনাবাদি ছিল। ধান ও বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। কিছু কিছু এলাকায় লেবু, লিচু, পেঁপে ও পেয়ারার চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। কৃষকরা পাহারা বসাতে গিয়ে খাদ্যর সন্ধানে আসা বন্য হাতির আক্রমণে শিকার হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ১৪ জন ব্যক্তি হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আনুমানিক ৩০ জন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীলিপ দত্ত বলেন, কৃষকরা কাজ করতে গিয়ে চাষাবাদ সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞ। কৃষকদেরকে কমিটি গঠন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

 

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক জানান, বাঁশখালীতে ব্যাপক সবজি উৎপাদন হয়। উপকূলীয় এলাকায় আগাম টমেটো দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় এখন মুলার চাষাবাদ হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। বাঁশখালীতে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণ সবজি এলাকার চাহিদা পূরণ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন।

 

বাঁশখালীর সংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাঁশখালীতে কৃষিখাতে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। কৃষকদেরকে সার, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট