চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শঙ্খ-ডলু নদীর ভাঙনে বদলে যাচ্ছে সাতকানিয়ার মানচিত্র

সৈয়দ মাহফুজ-উন-নবী খোকন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি শেষ সম্বল হারানোর আতঙ্কে থাকে সাতকানিয়া উপজেলার কয়েক হাজার ঘরবাড়ির মানুষ। শঙ্খ ও ডলু নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে উপজেলার আয়তন। এতে করে প্রতি বছর অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে শঙ্খ ও ডলু নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। খরস্রোতা ডলু নদী ও সাঙ্গু নদীর ভাঙন রোধে সঠিক বাঁধ নির্মাণ করা গেলে রক্ষা পাবে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। বর্ষা মৌসুমে উপজেলার সদর, এওচিয়া, নলুয়া, পশ্চিম ঢেমশা, বাজালিয়া, চরতি, আমিলাইষ, পুরানগড়সহ কয়েকটি ইউনিয়নে ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়। নদী ভাঙনে বছরের পর বছর বিলীন হয়েছে গ্রামাঞ্চলের শতশত ঘরবাড়ি। ভাঙন কবলিত কয়েকটি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতীতে বর্ষা মৌসুমে অধিক বৃষ্টির কারণে সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে শঙ্খ নদীর ভাঙনে শত শত বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার চরতি ইউনিয়নের মধ্যম চরতি, বামনডেঙ্গা, আমিলাইশের সাইরপাড়া, কৈবক্তপাড়া, হাফেজেরপাড়া, খলিফাপাড়া, নলুয়ার নবীরপাড়া, টেন্ডলপাড়া, মধ্যম নলুয়া, জেলেপাড়া ও কালিয়াইশের মাইঙ্গাপাড়া এলাকায় কয়েক হাজার বসতবাড়ি ও কয়েকশ’ একর আবাদি জমি গিলে খেয়েছে শঙ্খ নদী।

 

বাজালিয়া ইউনিয়নে নদীর তীরে বসবাসরত আব্দুর রশিদ বলেন,  ‘ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহমান উজান থেকে নেমে আসা খরস্রোতা সাঙ্গু নদী। এ নদীর ভাঙনে বছরের পর বছর বিলীন হয়েছে গ্রামটির শতশত ঘরবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি, বিদ্যালয় ও মসজিদ। যা রক্ষায় কয়েক যুগ ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, সমাজসেবক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন-নিবেদন করে আসছে গ্রামের মানুষ। তাতে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।’

 

পশ্চিম গাটিয়াডাঙ্গা এলাকার আবুল কালাম বলেন, ‘ডলু নদীর ভাঙনে বাপ দাদার রেখে যাওয়া বসতভিটের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো রকমে সুখে শান্তিতে দিনযাপন করছিলাম। কিন্তু রাক্ষুসে ডলু হঠাৎ আমাদের সব সুখশান্তি পানির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে স্থান পরিবর্তন করে তিনবার ঘর তৈরি করেছি। কিন্তু ডলু নদীর ভাঙনের কারণে সেসব ঘরে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ হয়নি। এই বছরেও ডলু নদী আমাদের বসতবাড়ি ও ভিটেমাটির চিহ্নটুকু পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।’

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নদী রক্ষায় আমাদের সকল উদ্যোগ এবং কর্মকান্ড অব্যাহত আছে। সাঙ্গু এবং ডলু নদীতে ভাঙন রোধে ১১ কিলোমিটার জুড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং ২১ কিলোমিটার জুুড়ে ড্রেজিং এর কাজ চলমান রয়েছে। ডলু এবং সাঙ্গু নদী ভাঙন রোধে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ জোহরা বলেন, ‘নদী ভাঙন রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু মহালের অধিকাংশ ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে বালু উত্তোলনের কারণে নদী এবং নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এছাড়া বালু মহলের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত আছে। মূলত নদীর বাঁধ রক্ষার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে হয়। যদি খবর পাই যে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন হচ্ছে সে ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি।’

লেখক: নিজস্ব সংবাদদাতা, সাতকানিয়া

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট