চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকা পূণ্যার্থীদের শীতবস্ত্র দিলেন ইউএনও

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৪:৩৯ অপরাহ্ণ

রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত তখন প্রায় ১টা। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ের তলদেশে খোলা আকাশের নিচে মাটিতে কাপড় পেতে শুয়ে আছেন হাজার হাজার দূরাগত পূণ্যার্থী। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে শীতটা একটু বেশি। ফলে দূরাগত পূণ্যার্থীদের অনেকেই হালকা কাপড় গায়ে দিয়ে জড়ো সড়ো হয়ে শুয়ে আছেন। এ খবর জেনে সেখানে কম্বল হাতে উপস্থিত হন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন। এরপর প্রকৃত দরিদ্র কিংবা শীতবস্ত্রহীন অসহায় নারী-পুরুষের কাছে নিজেই এগিয়ে গেলেন। তাদের হাতে তুলে দিলেন কম্বল। অনেককে ঘুম থেকে ডেকে তুলেও দেয়া হয় কম্বল। এতে খুশিতে ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকেন শীতে কাঁপতে থাকা নারী-পুরুষ। কম্বল পেয়ে অনেক মা তার শিশু সন্তানটিকে কম্বলে জড়িয়ে বুকে নেন পরম যত্নে। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা তীর্থ ভূমিতে অবস্থান করে অনেক শীতার্থ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি।

 

এসময় কম্বল পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এক শীতার্থ মা জোছনা রানী মজুমদার (৩৮) বলেন, সেই রংপুর থেকে চন্দ্রনাথধামে তীর্থ করতে এসেছি। আমরা গরীব মানুষ। হোটেলে থাকার মতো অবস্থা নেই। তাই খোলা আকাশের নিচে নিজের পরনের শাড়ি পেতে শুয়ে আছি। সাথে আমার ৩ বছর বয়সী ছেলে রাজু আছে। তাকে আঁচল দিয়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ইউএনও স্যার যেন দেবতার আশীর্বাদ হয়ে আমাদের কাছে এসে ঘুমে থেকে ডেকে তুলে কম্বল দিলেন। তারপর আমি সেই কম্বলে ছেলেকে জড়িয়ে রেখেছি।

 

একইভাবে কম্বল পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা ছায়া বালা সরকার বলেন, যখন শীতে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম তেমনি সময়ে হঠাৎ কোথা থেকে যেন ওই মানুষটা (ইউএনও) এসে আমাকে একটা কম্বল দিয়ে গেল। মনে হচ্ছিল বাবা ভোলানাথ যেন আমার কষ্টের কথা জেনে উনাকে পাঠিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। এভাবে কম্বল পেয়ে সকলেই খুশি হয়ে নানান মন্তব্য করেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রামাঞ্চল সীতাকুণ্ডে রাত বাড়লেই এখনো অনেক শীত পড়ছে। আর পাহাড়ের তলদেশে তো শীত আরো বেশি। কিন্তু এখানে চন্দ্রনাথধাম তীর্থে এসে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ খোলা আকাশের নিচে শুয়ে ছিলেন। যাদের অনেকেরই একটি শীতবস্ত্র নেই। শিশু-বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছিল। এসব জেনে আমি নিজে দেখে শুনে যারা প্রকৃত পক্ষেই শীতার্থ তাদেরকে শীতবস্ত্র দিয়েছি। তারা খুশি হয়েছেন এটিই আমার বড় পাওয়া।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম, সীতাকুণ্ড থানা (সার্কেলের) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নায়হানুল বারী, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার চৌধুরী, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো. শাহ আলম।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট