চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উপেক্ষিতই থাকল ‘সবুজ সম্ভাবনা’

মিজানুর রহমান

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:১৭ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ‘সবজি ভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত চন্দনাইশের দোহাজারী বাজার। রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এই বাজারে শুধু চন্দনাইশ নয়- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, কর্ণফুলীসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সবজি কেনা-বেচা করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এখানে লেনদেন হয় অন্তত ৫০ লাখ টাকা। তবে হিমাগার না থাকায় এই বাজারে কৃষকদের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশি লাভবান হন। তারা কম দামে সবজি কিনে শহরে বিক্রি করেন বাড়তি দামে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি নানা পদের সবজি ও ফল উৎপাদন হয় চন্দনাইশে। তবে ছোট ছোট কিছু উদ্যোগের অভাবে কৃষিতে চন্দনাইশের বিপুল সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এক দশক ধরে হিমাগার তৈরির দাবি জানিয়ে আসলেও তা স্থাপনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পণ্য বিপণন ব্যবস্থায় কৃষক-ভোক্তার চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের ‘জায়গা’ বেশি। থামানো যাচ্ছে না পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সহজে বাজারে আনা যাচ্ছে না পণ্য।

 

জানতে চাইলে সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের পূর্বকোণকে বলেন, সবজি বিপণন ব্যবস্থা সহজীকরণে আমরা কাজ করছি। সবজি হিমাগারের জন্য প্রকল্প নেওয়া হলেও সেখানে কিছু জটিলতা আছে। এটি কৃষকদের জন্য ব্যয়বহুল হবে। তবে ভর্তুকি দিয়ে হলেও হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন চন্দনাইশ সমিতির সভাপতি আবু তাহের। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়নে কৃষকদের সুবিধা বাড়াতে হবে।

 

আপেল পেয়ারার খ্যাতি দেশজুড়ে : শুধু সবজি নয়- বাংলার আপেল নামে খ্যাত চন্দনাইশের পেয়ারাও স্বাদে-গুণে ভরপুর। কাঞ্চননগর, হাশিমপুরের পেয়ারা দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পেয়ারা ‘যাদুতে’ স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষ। তবে বিপণন ও প্রক্রিয়াজাত করণে সমস্যা থাকায় পেয়ারার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। তবে এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পূর্বকোণকে জানান, দ্রুতই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

আশা দেখাচ্ছে পাহাড়ি ড্রাগন : চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ভিনদেশি ড্রাগন ফলের চাষও শুরু করেছেন অনেকে। চাষাবাদ সহজ এবং লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে এই ফল চাষীর সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে পেয়ারার মতো চন্দনাইশের কৃষকদের আশা দেখাচ্ছে পাহাড়ি ড্রাগন ফল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার পূর্বকোণকে বলেন, হাশিমপুর, লট-এলাহাবাদ, দোহাজারী, লালুটিয়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন অনেকে। লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে উৎসাহ দিচ্ছি আমরা।

 

মসজিদের উপজেলা চন্দনাইশ : সবজি-ফলের পাশাপাশি মসজিদের উপজেলা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে চন্দনাইশের। এখানের দুইটি পৌরসভা এবং আটটি ইউনিয়নে মসজিদের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এরমধ্যে ফতেনগর সিকদার বাড়িতে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মডেল মসজিদটি নজর কাড়ে সবার। তুরস্কের ব্লু মসজিদের আদলে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৪ সালে। শেষ হবে চলতি বছর। শুধু মসজিদ নয়- চন্দনাইশের জোয়ারায় নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ বুদ্ধমূর্তি। ২০১৬ সাল থেকে এই বুদ্ধমূর্তির নির্মাণকাজ চলছে।

 

স্মৃতিবিজড়িত আখেরি স্টেশন : চন্দনাইশের দোহাজারীর পরিচিতি মোঘল আমল থেকেই। ১৯৩০ সালে এই এলাকার বিখ্যাত খান পরিবারের বউকে আনার জন্য দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হয়। দোহাজারীর পর আর কোনো স্টেশন না থাকায় এটি আখেরি স্টেশন নামে পরিচিতি পায়। তবে ট্রেন চলাচল কমে আসায় এখানে রেলের জমি দখল করে এখন অনেকে স্থাপনা নির্মাণ করে অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। চলছে মাদক ব্যবসাসহ চুরি-ডাকাতিও। এবছর কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে এই দৃশ্যপট পরিবর্তন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

 

সংকটে শতবছরের পাগলা গারদ : চন্দনাইশের জোয়ারা গ্রামে দেশের একমাত্র আয়ুর্বেদিক পাগলা গারদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮০ সালে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে এই পাগলা গারদ থেকে অন্তত ২ হাজার মানসিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তবে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এই পাগলা গারদ এখন নানামুখী সংকটে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তার অভাবে আর্থিক দৈন্যতায় পড়েছে পাগলা গারদটি। পাগলা গারদের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সুধীর সেন পূর্বকোণকে বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও এ্যাম্বুলেন্স পেলে রোগীদের ভালো সেবা দেওয়া যাবে।

 

ধোপাছড়ি ঘিরে পর্যটনের হাতছানি : পাহাড়ি জনপদে ঘেরা চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য অকৃপণভাবে ঢেলে দিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় সেগুন বাগানগুলোর একটি গড়ে উঠেছে এই ধোপাছড়িতে। সাঙ্গু নদী আর পাহাড়ের সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে ধোপাছড়িতে বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা নিয়ে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে ধোপাছড়ি হতে পারে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনকেন্দ্র। হতে পারে নান্দনিক বোটানিকেল গার্ডেন। এতে প্রতিবছর ভালো রাজস্ব পাবে সরকার।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট