চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন পারকি সমুদ্রসৈকত

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ২:২৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামের দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নে এটির অবস্থান। এটি প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর। যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সার কারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়। এটি একটি উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত।

 

এক সময় বাংলাদেশে সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার এবং পতেঙ্গা-সৈকতকে মনে করা হলেও বর্তমানে পর্যটকদের কাছে পারকি সৈকত বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য। সৈকতের আশাপাশে ভাল হোটেল, মোটেল না থাকায় এখানে আসা পর্যটকদের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই গন্তব্যে ফিরে যেতে হয়।

 

এ সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক পর্যটন-স্পট বানাতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স। পুরো পারকি সমুদ্রসৈকতের চেহারা বদলে দিচ্ছে সরকারের এই মেগা প্রকল্প। পারকিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ   হাসিনা ঘোষিত এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন প্রকল্পের কাজ।

 

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ এখন দৃশ্যমান। টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর দু’পাড় সংযুক্ত হচ্ছে। এ পাড়ের আনোয়ারা পয়েন্টের টানেলের টিউবের মুখ বের হয়েছে পারকি সিইউএফএল এলাকায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার হলেও টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব হবে মাত্র ৮ কিলোমিটার। টানেল ব্যবহার করে খুব সহজেই পর্যটকরা ১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারবেন পারকি সমুদ্র সৈকতে।

 

চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে যানবাহন উঠবে কক্সবাজার মহাসড়কে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত প্রায় এগারো কিলোমিটার ছয় লেনের সড়ক। ফলে আনোয়ারার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে।

 

টানেলকে ঘিরে শিল্পকারখানা এবং আবাসনের পাশাপাশি খুলবে পর্যটন শিল্পের নতুন দুয়ার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পারকি সমুদ্রসৈকত। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান, বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। ফলে পর্যটন খাত থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারকি সমুদ্রসৈকতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে এ প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মধ্যে মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি ডবল ডুপ্লেক্স কটেজ এবং ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চারতলা বিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন। এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকবে পর্যটন অফিস, দ্বিতীয় তলায় থাকবে দুইটি দোকান, একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে দুইটি বার, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল। তিনতলা বিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম ৩৫টি, কমপ্লেক্সের সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম রয়েছে। একটি ওয়াশ ব্লক, যেখানে নারী-পুরুষের আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া একটি লেক, একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, দুইটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড। একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা থাকবে এবং গাড়ি  পার্কিংয়ের সুবিধাও রাখা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ভবনের সামনে সাজানো বাগান থাকবে।

 

প্রকল্পের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী অসীম শীল বলেন, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কোভিডের কারণে নির্মাণকাজে একটু ধীরগতিতে হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা-কর্ণফুলীর সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর চট্টগ্রামের একটি জনসভায় পারকি সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক পর্যটন-শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী পারকি সৈকতে শুরু হয়েছে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ।

 

বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ‘পারকি সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের আগমন দিনদিন বাড়ছে। আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হলে প্রতিদিন ভোরে সমুদ্রসৈকতের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকবে।’

 

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আনোয়ারা একটি শিল্প জোন। বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়নে আনোয়ারা পরিণত হতে যাচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন-স্পটে। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষে পারকি সমুদ্রসৈকত একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। শিল্প এলাকায় এ রকম একটি প্রাকৃতিক সম্পদ বৈরি আবহাওয়া মোকাবেলায় দারুণ কাজ করে।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট