চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হাতি

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

পূর্ণবয়স্ক একটি হাতি দিনে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি খাবার গ্রহণ করে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাতির ভূমিকা অসীম। কিন্তু চট্টগ্রামের বন কেটে গড়ে উঠছে লোকালয়। এতে নিজেদের আবাসস্থল খুঁজে না পেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে বন্যহাতি প্রায়ই মানুষের ওপর তা-ব চালাচ্ছে। আনোয়ারায়ও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মন্তব্য হাতি-গবেষকদের।

 

রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসস্থল তৈরি করতে গিয়ে কক্সবাজারে হাতির অভয়ারণ্য এলাকার বন-জঙ্গল নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী দেয়াঙ পাহাড়ে আসছে হাতির পাল। সম্প্রতি যে এলাকাগুলোতে হাতি আসছে, আগে কখনও এমন বিচরণ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। হঠাৎ হাতির মুখোমুখি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন মানুষ।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় ১৭ জনের প্রাণহানিসহ অর্ধশতাধিক লোক আহতের ঘটনা ঘটেছে। চুনতি অভয়ারণ্য থেকে পথ হারিয়ে ২০১০ সালের দিকে বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকা হয়ে

 

বন্যহাতি দেয়াঙ পাহাড়ে ঢুকেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়া ও নিজের আবাসস্থলে পৌঁছতে না পারায় হাতিগুলো লোকালয়ে চড়াও হচ্ছে। সাধারণত দিনের বেলায় হাতি পাহাড়ে থাকলেও রাত নামলেই চলে আসছে গ্রামে। এ সময় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে।

 

হাতির দল সন্ধ্যা হলেই আনোয়ারার বারশত ইউনিয়নের কবিরের দোকান, পশ্চিমচাল, কান্তিরহাট, বটতলী ইউনিয়নের জয়নগর, ছিরাবটতলী, গুচ্ছগ্রাম, জয়নালপাড়া, বৈরাগ ইউনিয়নের দেয়াং বাজার, উত্তর গুয়াপঞ্চক, মধ্যম গুয়াপঞ্চক, খানবাড়ি, মোহাম্মদপুর, বদলপুরা, বন্দর, বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও লোকালয়ে প্রবেশ করে বাড়িঘর ভাঙচুর চালিয়ে ফসল নষ্ট করে থাকে।

 

আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরাতে মশাল জ্বালিয়ে পাহারা বসিয়ে রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির পরও বন বিভাগ এখনও পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বনবিভাগও ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সারছে। হাতি সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং ভাঙচুর ও ক্ষতি হলে পরামর্শ হিসেবে জিডি করতে বলা হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। এ নিয়েও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি।

 

বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চুনতি অভয়ারণ্যে ৪২টি ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকা মিলিয়ে ৪৭টি বন্যহাতি রয়েছে। এই হাতিগুলোর মধ্য থেকে পথ হারিয়ে দেয়াঙ পাহাড়ে ঢুকে পড়ছে হাতির দলটি।

 

কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে ২০১১ সাল থেকে বড়উঠান ইউনিয়নের ৪ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৫০-৬০ জন। এতে প্রত্যককে ১ লাখ টাকা করে এবং সর্বশেষ একজনকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বনবিভাগ। বিগত ১২ বছর ধরে হাতির তান্ডবের শিকার এ উপজেলার মানুষ।

 

আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, হাতিগুলো প্রতিবছর খাবারের খোঁজে আসলেও চলে যেত। বিগত ৫-৬ বছর ধরে এখানে অবস্থান করছেন। দিনে পাহাড়ে থাকলেও সন্ধ্যা হলে চলে আসে লোকালয়ে। এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে আমার ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ মারা গেছে প্রায় ১৭ জনের মত। বনবিভাগ ক্ষতিপূরণ দিলেও হাতি তাড়ানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত নেননি। এসব বিষয়ে আমরা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি।

 

কোরিয়ান কেইপিজেডের আইন ও ভূমি  কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত দুই বছরে বন বিভাগকে বেশ কয়েকটি ও ডিসিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। হাতি কেইপিজেডের বনায়নকৃত বড়-বড় ফলবান নারকেলসহ নানা গাছপালা ও কয়েকটি স্থাপনার ক্ষতি করেছে। হাতি আমাদের অন্তত ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে।

 

জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বাঁশখালী ইকো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মু. আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বন বিভাগ। সম্প্রতি ২১-২২ অর্থবছরে ৮৭ জন ক্ষতিগ্রস্তকে ২৭ লাখ টাকা ও চলতি অর্থবছরে ৩২ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করা করেছে।

 

তিনি আরো বলেন, বন্যহাতি জোর করে সরিয়ে নেওয়া যায় না। হাতিরা স্বাভাবিকভাবে ফিরে যাবে। তবে হাতি থেকে নিজেদের রক্ষায় স্থানীয়দের সতর্ক ও সচেতন থাকতে আহ্বান জানান তিনি।

 

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা মোহাম্মদ হাসান বলেন, বন্যহাতি বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত থানার ৪৯ টি জিডি করেছে এলাকার লোকজন। তবে আমি এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধি, চৌকিদারসহ সবাইকে হাতিগুলোর বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট