চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিঠা পানির সংকটে উপজেলাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১:১৪ অপরাহ্ণ

মানুষের বেঁচে থাকার বড় নিয়ামত পানি। পানি ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যে কারণে বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। সেই জীবন রক্ষার পানি বছরের পর বছর ধরে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের অংশ থেকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড গভীর নলকূপ স্থাপন করে তুলে নিচ্ছে কারখানায়। যার কারণে এসব এলাকার সাধারণ মানুষের নলকূপগুলোতে বিগত কয়েক বছর ধরে পানি সংকট চলছে।

 

সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) উৎপাদন চালু রাখতে হলে ঘণ্টায় ৮০০ মেট্রিক টন মিঠা পানির প্রয়োজন হয়। এসব পানি পাশের কর্ণফুলী নদী থেকে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে চাহিদা মতো পানি পাচ্ছে না কাফকো। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি তুলে নিচ্ছে কারখানায়। যার কারণে উপজেলার বৈরাগ, চাতরী, বারশত ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের অসংখ্য সাধারণ মানুষ বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের নলকূপগুলোতে পানি পাচ্ছে না।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাফকোর উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ফেলার কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। যার কারণে অগভীর নলকূপগুলোতে পানি মিলছে না। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে বছর দুয়েক ধরে পুকুর থেকে পানি নিয়ে ফুটিয়ে পান করে আসছিলেন। কিন্তু এখন আর পুকুরেও ঠিকমতো পানি থাকছে না। এমনকি পুকুরে পানি শুকিয়ে গেছে।

 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানা গেছে, আনোয়ারায় সরকারি হিসাবে টিউবওয়েলর সংখ্যা ৪ হাজার ১৬০টি। চালু ৩ হাজার ৬৭৮টি। অকেজো ৪৮২টি। গভীর নলকুপ চালু ২৩৩৫টি। অকেজো ২৮৬টি, অগভীর নলকুপ চালু ১৩১৬টি। অকেজো ২২০টি।

 

বৈরাগ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. মুসা বলেন, আমাদের গ্রামে পানি সংকট লেগেই আছে। আগে এত খাবার পানির সংকট হয়নি। গত এক বছর ধরে গ্রামের প্রতিটি টিউবওয়েলই অকেজো। টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না।

 

তিনি বলেন, পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট করছি। গ্রামে অনেকেরই গভীর নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্য নেই। তাছাড়া পুকুরের পানিও নেই। এসবের একমাত্র কারণ কাফকো। তারা মাটির নিচ থেকে পানি তোলার কারণে এমনটা হচ্ছে এলাকায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাকিম বলেন, টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। এমনকি পুকুরের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। কাফকোর পানির মেশিনগুলো রাতদিন চালিয়ে মাটির নিচের সব পানি নিয়ে নিচ্ছে। এভাবে চলার কারণে আমাদের এই দশা।

 

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী প্রিয়াংকা চাকমা বলেন, টিউবওয়েলে পানি না আসার বিষয়টি লোকজন আমাদের জানাচ্ছেন। আনোয়ারা শুধু বৈরাগ ইউনিয়ন নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যে কারণে টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকট সমস্যা সমাধানে দ্রুত  বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হবে।’

 

বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, ‘কাফকো স্থাপনের আগে এই এলাকায় পুকুরভরা পানি ছিল। ইউনিয়নে অনেক এলাকায় নলকূপে পানি পাওয়া যায় না। তাছাড়া পুকুরের পানিও থাকে না। সব পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। সিইউএফএল রাষ্ট্রীয় কোম্পানি হয়ে কালুরঘাটের কর্ণফুলী নদী এলাকা থেকে যদি মিঠাপানি আনতে পারে তাহলে কাফকো পানি কেন আনতে পারবে না। কাফকো কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয় নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি।’

 

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

লেখক : নিজস্ব সংবাদাদাতা, আনোয়ারা।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট