চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছবি-শরীফ চৌধুরী

ম্লান নৌ-বাণিজ্যের জৌলুস

মিজানুর রহমান

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

পঞ্চাশের দশকের কথা। উত্তাল সাগর, খরস্রোতা নদী পেরিয়ে চানখালী খালের তীরে এসে থামতো লবণ বোঝাই সাম্পান। মুহূর্তেই সরগরম হয়ে উঠতো পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের জমজমাট বিকিকিনিতে হাতবদল হতো কোটি কোটি টাকা। ধীরে ধীরে সেখানে গড়ে উঠে কারখানা। সারাদেশের বাজার দখলে নেয় এসব কারখানায় উৎপাদিত লবণ। তবে চানখালী খালের এই জৌলুস এখন আর নেই। দখল-দূষণে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে খালটি।

 

শুধু চানখালী খাল নয়- গত কয়েক দশকে পটিয়ার ১৭টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৩৭টি খাল ভরাট হয়ে গেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পটিয়ায় অর্থনৈতিক ‘সমৃদ্ধির দ্বার’ হিসেবে পরিচিত এসব খাল ‘অকেজো’ হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে নৌ-বাণিজ্যের জৌলুস। পণ্য পরিবহনে বাধ্য হয়ে সড়কপথকেই বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না তারা।  খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু শিল্পখাত নয়- ক্ষতির শিকার হচ্ছে     কৃষিখাতও। পটিয়ায় প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদি জমি থাকলেও সেচের অভাবে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ৩৭ খালের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করতে হবে বলে পূর্বকোণকে জানিয়েছেন বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ হোসেন। তিনি জানান, বরাদ্দ না থাকায় খনন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

যানজট ‘হাওয়া’ বাইপাসে :

কয়েকবছর আগেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত ১০টি রুটের যাত্রীদের কাছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পটিয়া অংশ ছিল দীর্ঘ যানজট প্রবণ এলাকা। তবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্দ্রপুল থেকে কচুয়াই গিরিশ চৌধুরী বাজার পর্যন্ত নির্মিত ৫ কিলোমিটারের বাইপাসে পটিয়ার যানজট এখন ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে। শুধু বাইপাস নয়-গত দেড় দশকে পটিয়ায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। সড়ক, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের এসব উন্নয়ন কাজের সুফল পাচ্ছেন পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ।

আদালত-বিনোদনকেন্দ্র উপেক্ষিত :

তবে পটিয়া আদালত ভবনে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ১৪০ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০১০ সালে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ তলা আদালত ভবন নির্মাণের একটি প্রস্তাব যায় মন্ত্রণালয়ে। পরে সেটি ১০ কোটি টাকায় ৩ তলা ভবন হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হলেও ফাইল আটকে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আদালত ভবনের পাশাপাশি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বিনোদনকেন্দ্রেও। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও পটিয়ায় গড়ে উঠেনি কোনো বিনোদনকেন্দ্র।

যুগ যুগ ধরে জ্বলছে গ্যাস :

পটিয়ার বুদবুদি ছড়ার পাহাড়ে যুগের পর যুগ ধরে জ্বলছে ‘গ্যাস’। তবে এই গ্যাস উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এখনও। ১৯৯৯ সালে সেনাবাহিনী ও বিদেশি তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। ২০০৯ সালে বুদবুদি ছড়ার তেল-গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক জরিপের কাজ পুনরায় শুরু করে বাপেক্স। তবে পাকিস্তান আমলে ঢালাইকৃত সীসা কূপকে পাশ কাটিয়ে গ্যাস উত্তোলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এই সংস্থা।

ভালো সেবা মিলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে :

একসময় দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য থাকলেও ব্যবস্থাপনা কমিটির কঠোর পদক্ষেপের কারণে এখন তা নেই পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পটিয়াসহ পাশের উপজেলা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে এই কমপ্লেক্সে ভিড় করেন রোগীরা। বহিঃবিভাগে দৈনিক গড়ে ৫০০ ও জরুরি বিভাগে গড়ে ১৪০ জন রোগী সেবা নেন। রোগী বাড়ায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে পূর্বকোণকে জানিয়েছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ।

সংস্কৃতি-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পটিয়া :

আধুনিকতার চরম এই উৎকর্ষের যুগেও নাটকের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বেড়াজাল ছিঁড়ে মুক্ত সংস্কৃতি চর্চায় পিছিয়ে নেই পটিয়া। মঞ্চনাটক, আঞ্চলিক গানের তীর্থস্থান বলা হয় পটিয়াকে। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতিধন্য পটিয়ার ধলঘাটের শতবর্ষী সমবায় ‘ব্যাংক’- ধলঘাট আর্বান সমবায় সমিতি লিমিটেড এখনও কাজ করছে এলাকার উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে। মাত্র ১৭ জন সদস্য নিয়ে এই সমিতির যাত্রা শুরু হলেও এখন সমিতির সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৯ জনে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট