চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঘুচে যাচ্ছে ৩ যুগের বঞ্চনা

মোহাম্মদ আলী

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এক সময় রাঙ্গুনিয়ার জনজীবন ছিল স্থবির। দুঃখ-দুর্ভোগের মধ্যে ছিল মানুষের বসবাস। এ দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিত রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে। তবে আগের সেই রাঙ্গুনিয়া এখন আর নেই।

 

১৫ বছরের ব্যবধানে এ জনপদে এসেছে অনেক পরিবর্তন। সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের হাওয়া। নদীভাঙন রোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, একের পর এক নতুন সেতু তৈরি, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং, উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কসমূহ সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎসহ সবক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে নতুন নতুন পরিকল্পনা।

 

উন্নয়নে অনেক দূর এগিয়ে গেছে রাঙ্গুনিয়া। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিশাল এই কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রাঙ্গুনিয়া আসনের সংসদ সদস্য ও সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে তিনি রাঙ্গুনিয়ার অবকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নকাজ শুরু করেন।

 

ড. হাছান মাহমুদ ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপির তৎকালীন হেভিওয়েট প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিএনপির দুর্গ যেমন ভাঙেন, তেমনি বিগত ১৫ বছরে রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নে অনন্য এক নজির সৃষ্টি করেন। রাঙ্গুনিয়াবাসীর ৩৭ বছরের দুঃখ ঘুচাচ্ছেন তিনি।

 

এতসব উন্নয়নের পরও রাঙ্গুনিয়ায় এখনো কিছু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের গোলা খ্যাত গুমাইবিলে গত এক দশক ধরে নানা স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। উত্তর চট্টগ্রামের উপশহর খ্যাত ‘চন্দ্রঘোনা’ থেকে মরিয়মনগর চৌমুহনী ও রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এলাকার নগরায়নের বিস্তৃতি এখন গুমাইবিলকে গিলে খাচ্ছে। ইতোমধ্যে গুমাইবিলে পাঁচ শতাধিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটা স্থাপনও বাদ যায়নি শস্যভাণ্ডার গুমাইয়ের বুকে। বিলের উপকণ্ঠে চন্দ্রঘোনা ও নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ইটভাটা। সেচ সঙ্কট, বিলের অভ্যন্তরে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় মূল সড়ক থেকে দূরবর্তী প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে।

 

চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলের পরিধি ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন জমি ভরাট করে তোলা হচ্ছে নানা স্থাপনা। প্রতিনিয়তই চলছে ইমারত নির্মাণ। এ অবস্থায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই বিল। তবে গুমাইবিলে ইমারত নির্মাণের বিরুদ্ধে সুখবর দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী। তিনি বলেন, গুমাইবিল রক্ষার্থে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মহোদয় এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্মাণাধীন অনেক স্থাপনার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইটভাটাসহ অন্যান্য স্থাপনার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

 

পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনাময় এলাকা রাঙ্গুনিয়া। পাহাড়ি এলাকা ও কর্ণফুলী নদীর তীর ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তুললে টানতো পর্যটকদের। তাতে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতো উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট মানুষেরা। উন্নয়নের সাথে সাথে রাঙ্গুনিয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে মানুষের বসতি ও নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে হারে বাড়েনি চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের প্রশস্ততা। তাতে যানবাহনের চাপে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন যাত্রীরা।

 

রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘এক সময় রাঙ্গুনিয়া সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ড. হাছান মাহমুদ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেন। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী, শিলক ও ইছামতি নদীর ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেন। বর্তমানে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং করা হচ্ছে। আগে কর্ণফুলী নদী রাঙ্গুনিয়াবাসীর জন্য অভিশাপ ছিল। ড্রেজিং ও ভাঙন রোধের ফলে এ নদী এখন আমাদের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এ উপজেলার যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। যা স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৭ বছরেও হয়নি।’

 

পশ্চিম বেতাগী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জামশেদ চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিটি সড়কে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। গোডাউন-বান্দরবান সড়কের শিলক খালের উপর তিনটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ উপজেলার আনাচে-কানাচে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।’

 

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়াকে ঘিরে একের পর এক উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যোগাযোগ অবকাঠামোতে এনেছেন আমূল পরিবর্তন। কর্ণফুলী নদীর ওপারে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তাতে নতুন নতুন বসতি নির্মাণসহ মানুষের জীবনমানে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। তাছাড়া বিনোদন পিয়াসীদের জন্য তৈরি করেছেন রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল এভিয়ারি এন্ড ইকো পার্ক। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাখিশালা। তাই এ মুহূর্তে এসব উন্নয়নের রূপদানের জন্য চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সম্প্রসারণ এখন সকল মহলের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট